সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইস্তিখারা কি ও এর গুরুত্ব


ইস্তিখারা কি ও এর গুরুত্ব
ইস্তেখারা কাকে বলে? কিভাবে ইস্তেখারার নামায পড়তে হয়?
ইস্তেখারা শব্দের অর্থ : ইস্তেখারা শব্দটি আরবী। আভিধানিক অর্থ, কোন বিষয়ে কল্যাণ চাওয়া।
মুফতি সাঈদ আল হাসান

ইস্তিখারা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। ইস্তেখারা শব্দটি আরবী। আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ কল্যাণ প্রার্থনা বা কোন বিষয়ে কল্যাণ চাওয়া। ইসলামী পরিভাষায়: দুরাকাত নামায ও বিশেষ দুয়ার মাধ্যমে আল্লাহর তায়ালার নিকট পছন্দনীয় বিষয়ে মন ধাবিত হওয়ার জন্য আশা করা। অর্থাৎ দুটি বিষয়ের মধ্যে কোনটি অধিক কল্যাণকর হবে এ ব্যাপারে আল্লাহর নিকট দু রাকায়াত সালাত ও ইস্তিখারার দুয়ার মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার নামই ইস্তেখারা।

হযরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) প্রত্যেক কাজে আমাদের ইস্তিখারা করা সম্পর্কে এমন ভাবে শিক্ষা দিতেন যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের কেউ যখন কোন কাজ করার করবে তখন সে দুরাকাত নফল নামাজ আদায় করবে, এরপর সে পাঠ করবে:

আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্তাখিরুকা বি ইলমিকা ওয়া আস্তাকদিরুকা বি কুদরাতিকা ওয়া আসআলুকা মিনফাদ্বলিকাল আযীম, ফা ইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু, ওয়া তা’লামু ওয়ালা আ’লামু ওয়া আন্তা আল্লামুল গুয়ূব। আল্লাহুম্মা ইনকুন্তা তা’লামু আন্না হাযালআমরা (এখানে নিজের কাজের কথা উল্লেখ করবেন) খাইরুল্লি ফি দ্বীনী ওয়া মাআশীয়ী ওয়া আক্বিবাতি আমরী (অথবা বলবে: আ’ জিলি আমরি ওয়া আজিলিহি) ফাকদিরহু লি ওয়া ইয়াসসিরহু লী সুম্মা বারিকলী ফিহি ওয়া ইন কুনতা তা’লামু আন্না হাযাল আমরা (এখানে নিজের কাজের কথা উল্লেখ করবেন) শাররুল্লী ফী দীনী ওয়া মাআশীয়ী ওয়াআক্বিবাতি আমরী (অথবা বলবে: আ জিলি আমরী ওয়া আজিলীহি) ফাসরিফহু আন্নিওয়াসরীফনি আনহু ওয়াকদির লিয়াল খাইরা হাইসু কানা সুম্মা আরদ্বিনী বিহি।

ইসলামী পরিভাষায় :

দুই রাকাত সালাত ও বিশেষ দুয়ার মাধ্যমে আল্লাহর তায়ালার নিকট দুটি বিষয়ের মধ্যে কল্যাণকর বিষয়ে মন ধাবিত হওয়ার জন্য আশা করা। অর্থাৎ দুটি বিষয়ের মধ্যে কোনটি অধিক কল্যাণকর হবে এ ব্যাপারে আল্লাহর নিকট দু রাকাত সালাত ও ইস্তিখারার দুয়ার মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার নামই ইস্তেখারা। [ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী শরহু সহীহিল বুখারী]

ইস্তেখারা করার হুকুম :

এটি সুন্নাত। যা সহীহ বুখারীর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তবে কেউ কেউ নফল ও বলেছেন।

ইস্তেখারা কখন করতে হয়?

মানুষ বিভিন্ন সময় একাধিক বিষয়ের মধ্যে কোনটিকে গ্রহণ করবে সে ব্যাপারে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। কারণ, কোথায় তার কল্যাণ নিহিত আছে সে ব্যাপারে কারো জ্ঞান নেই। তাই সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য মহান আল্লাহর তাআলার পক্ষ থেকে উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়। যেন তিনি সিদ্ধান্তকে এমন জিনিসের উপর স্থির করে দেন যা তার জন্য উপকারী ও কল্যাণকর হয়।

এই নামাযের নির্দিষ্ট সময় নেই। সাধারণ নফলের হুকুমেই পড়ে এটি।

যেমন: বিয়ে, চাকরী, সফর ইত্যাদি বিষয়ে ইস্তেখারা করতে হয়।

ইস্তেখারা করা কত টুকু সঠিক? শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন:

সে ব্যক্তি অনুতপ্ত হবে না যে স্রষ্টার নিকট ইস্তেখারা করে এবং মানুষের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার উপর অটল থাকে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

আর তুমি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মানুষের সাথে পরামর্শ কর। অত:পর আল্লাহর উপর ভরসা করে (সিদ্ধান্তে অটল থাক)। আল্লাহ ভরসাকারীদের পছন্দ করেন।  [সূরা আলে ইমরান: ১৫৯]

কাতাদা(রহঃ) বলেন:

মানুষ যখন আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পরে পরামর্শ করে তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সব চেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার তাওফীক দেন।

ইমাম নববী রহ. বলেন:

আল্লাহ তায়ালার নিকট ইস্তেখারা করার পাশাপাশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ভাল লোকদের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার। কারণ, মানুষের জ্ঞান-গরিমা অপূর্ণ। সৃষ্টিগতভাবে সে দুর্বল। তাই যখন তার সামনে একাধিক বিষয় উপস্থিত হয় তখন কি করবে না করবে, বা কি সিদ্ধান্ত নিবে তাতে দ্বিধায় পড়ে যায়।

ইস্তেখারা করার নিয়ম:

১) প্রথমে ওযু করতে হবে। 

২) ইস্তিখারার উদ্দেশ্যে দু রাকাত সালাত পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে কতক ওলামায়ে কেরাম প্রথম রাকাতে সূরা কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস পড়তেন। তবে যে কোন সূরা পড়া যাবে। 

৩) নামাযের সালাম ফিরিয়ে আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব, ও মর্যাদার কথা মনে জাগ্রত করে একান্ত বিনয় ও নম্রতা সহকারে আল্লাহর প্রশংসা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দুরূদ পেশ করার পর নিচের দুয়াটি পাঠ করবে: 

اللَّهُمَّ إنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ , وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ , وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلا أَقْدِرُ , وَتَعْلَمُ وَلا أَعْلَمُ , وَأَنْتَ عَلامُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ (………) خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي) أَوْقَالَ : عَاجِلِأَمْرِيوَآجِلِهِ) فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ , اللَّهُمَّ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ(………) شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي (أَوْقَالَ : عَاجِلِأَمْرِيوَآجِلِهِ) فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِي الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ ارْضِنِي بِهِ (……). 

এ দুআর যেখানে “হাজাল আমর অথবা (………) এরকম দেয়া আছে ওখানে পৌঁছে মনে মনে যে কাজটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে সেটি উচ্চারণ করবে আরবীতে বা মনে মনে সে বিষয়টি ভেবে নিবে। 

ইস্তেখারার নামাযের দলিল-

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَلِّمُنَا الاِسْتِخَارَةَ فِي الأُمُورِ كُلِّهَا كَمَا يُعَلِّمُنَا السُّورَةَ مِنَ القُرْآنِ، يَقُولُ: إِذَا هَمَّ أَحَدُكُمْ بِالأَمْرِ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ مِنْ غَيْرِ الفَرِيضَةِ، ثُمَّ لِيَقُلْ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ العَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلاَّمُ الغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعِيشَتِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي، أَوْ قَالَ: فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ، فَيَسِّرْهُ لِي، ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعِيشَتِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي، أَوْ قَالَ: فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ، فَاصْرِفْهُ عَنِّي، وَاصْرِفْنِي عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِي الخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ أَرْضِنِي بِهِ، قَالَ: وَيُسَمِّي حَاجَتَهُ. (سننر الترمذى، رقم الحديث-480

হযরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা:) প্রত্যেক কাজে আমাদের ইস্তেখারা করা সম্পর্কে এমন ভাবে শিক্ষা দিতেন যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের কেউ যখন কোন কাজ করার করবে তখন সে দু রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে, এরপর সে এই দুয়াটি পাঠ করবে।

এটা বলে উপরের দুয়াটি বর্ণনা করেন।  ভাল মন্দের ফায়সালা কিভাবে হবে?

নামাজ শেষ করে কারো সাথে কথা না বলে কিবলামুখী হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। ঘুম থেকে জাগার পর মন যেদিকে সায় দিবে, বা যেদিকে আগ্রহী হয়ে উঠবে, সেটিই ফলাফল মনে করবে। [তুহফাতুল আলমায়ী-২/৩৩৮, বেহেশতী জেওর]


ইস্তিখারার রেজাল্ট কিভাবে বুঝবেন?

এটি একটি কমন ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। রাসুল (সাঃ) আনাস (রাঃ) কে বলেছেন: সাত বার অর্থাৎ পর পর সাতদিন ইস্তিখারা করে মনের গতি ও ঝোঁক যে দিকে যায় তার সিদ্ধান্ত নিতে। কারণ অনেক সময় সরাসরি কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়না। তাই না জানার কারণে কনফিউশন থেকে যায়। তাই বিষয়টিকে আরো পরিষ্কার করতে এবং আরো কার্যকর হিসেবে গ্রহণ করতে কিছু টিপস উল্লেখ করলাম। যারা বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত ইস্তিখারা করে সুফল ভোগ করেছেন তাদের সাথে একান্তে আলাপে যা জানা গেল তা পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করলাম:

  • আপনি যে বিষয়ে ভাবছেন আপনি স্বপ্নে হুবহু সে বিষয়ের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন কিংবা তা বর্জনমূলক কাজ দেখতে পাবেন এবং এটি সরাসরি আপনার সিদ্ধান্তেই। (এটি হচ্ছে ইস্তিখারার সর্বোচ্চ রেজাল্ট)।
  • অথবা আপনি যা ভাবছেন সে বিষয়ে স্বপ্নে আপনার পরিবারের সদস্যদের কিছু ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক কাজ দেখতে পাবেন।
  • অথবা স্বপ্নে কিছু দেখবেননা কিন্তু আপনার মন যত দিন যায় তত বিষয়টির দিকে ঝোঁকতে থাকে কিংবা তার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হতে থাকে।
  • অথবা এ ব্যপারে আপনার মন স্বাভাবিক এবং নেতিবাচক কিছু আসছেনা। তাহলেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
  • কেউ প্রথম রাতেই রেজাল্ট পেয়ে যান এবং পরে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন। আবার কারো বিলম্বও হয়ে থাকে।
  • আল্লাহ্‌র সাথে আপনার সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে আপনি আরও উচ্চ মানের রেজাল্ট ও পেতে পারেন।

ইস্তিখারার আদব

  • আল্লাহ্‌র প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও ভরসা রেখে ইস্তিখারা করতে হবে।
  • পর পর ন্যুনতম সাত দিন ইস্তিখারা করতে হবে।
  • ইস্তিখারার রেজাল্টের জন্য ধৈয্য সহকারে অপেক্ষা করতে হবে। আল্লাহ্‌ আপনাকে সহযোগিতা করবেন এটা মনে রাখলে আরো সহজ হবে।
  • ইস্তিখারা করার সময় আপনার বিষয়ে আপনাকে নিউট্রেল হতে হবে এই অর্থে যে আপনি যা রেজাল্ট পাবেন সে অনুযায়ী কাজ করার মানসিকতা রাখেন এবং এর মধ্যেই কল্যাণ মনে করেন।
  • ইস্তিখারার রেজাল্ট পেতে বিলম্ব হলে রেজাল্ট পাবেননা এমনটা ভেবে নিরাশ হওয়া যাবেনা।
  • ইস্তিখারার রেজাল্ট পেলে বিশেষ ব্যক্তি কিংবা বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অন্যের কাছে বলা ঠিক নয়। কারণ এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌র উপর আপনার তাওয়াক্কুল বাড়ছে এবং ধীরে ধীরে আল্লাহ্‌র সাথে আপনার সম্পর্ক নিবিড় হচ্ছে। আর তাই এমন গোপন বিষয়টা অহেতুক ফাঁস করলে আপনার ইবাদতের মান কমে যাবে এবং নিজের ব্যপারে উচ্চ ধারণা হেতু অহংকার প্রকাশের সম্বাবনা আছে। তাছাড়া এটি আপনার কাজের জন্য দৃঢ় একটি সমর্থক এবং আপনার মনোবলকে দৃঢ় করতে সহকারী। কিন্তু অন্য মানুষের জন্য এটি অকাট্য কিছু নয়। তবে তাদের কাছেই বলবেন যারা আপনাকে জানেন এবং বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আপনাকে আপনার উদ্দৃষ্ট কাজে সহযোগিতা করতে পারেন।
  • নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি রেজাল্ট না পাওয়া যায় তাহলে আল্লাহ্‌ আপনাকে দিতে পারেন এই ধারণাকে আরো প্রবল করে কিছু দিন পর একই নিয়মে আবার চেষ্টা করুন। ইনশা আল্লাহ্‌ আপনি নিরাশ হবেননা।

রিফলেকশন:

  • আসলে ইস্তিখারার বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ্‌র সাথে ব্যক্তির সম্পর্কের উপর ভিত্তি করেই হয়ে থাকে। বিষয়টি আল্লাহ্‌র সাথে একান্ত আপনার নিজের। তাই পূর্ণ স্কেলে পরিমাপ আপনিই করতে পারবেন। তবে আল্লাহ্‌র সাথে আপনার বর্তমান সম্পর্ক বেশী ভালো নয় এটা ভেবে ইস্তিখারা থেকে দূরে থাকলে আপনি অপসিদ্ধান্তে ভোগবেন। তাই ইস্তিখারার মাধ্যমেই আল্লাহ্‌র সাথে আপনার সম্পর্ক সৃষ্টি করুন এবং পরিমাপ করুন।
  • আপনার ঈমান, বর্তমান তাওয়াক্কুল এবং আল্লাহ্‌র সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে খুব কম সময়ে খুব স্পষ্ট রেজাল্ট কিংবা কিছু বিলম্বে তুলনামূলক কম স্পষ্ট রেজাল্ট পাবেন। এজন্য প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রাখতে হবে। এতেই আপনার কল্যান নিহিত।
  • আপনি যদি একবার ইস্তিখারা রেজাল্ট পান তাহলেই আপনি এর স্বাদ আস্বাদন করবেন এবং এর পর যে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজেই ইস্তিখারা করতে আপনার মন চাইবে।
  • ইস্তিখারার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র সাথে বান্দার সম্পর্ক নিবিড় হয় এবং ঈমান ও তাওয়াক্কুল বেড়ে যায়। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেছেন: “মুমিন ব্যক্তিদের আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা উচিৎ”।[১৪:১২] তিনি আরো বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র উপর তাওয়াক্কুল করে তিনি তার জন্য যথেষ্ট।[৬৫:৩]
  • এই ইস্তিখারার সুফল একে বারেই নিশ্চিত। শুধু গ্যারান্টির জন্য প্রয়োজন আপনার প্র্যাকটিস।

 আপনার সিদ্ধান্ত:

আসুন! আমরা মহান আল্লাহ্‌র কাছে আমাদের প্রয়োজন মেটাতে একটু ধরনা দেই। আমাদের নিজেদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আল্লাহ্‌র কাছে ইস্তিখারা করতে শিখি এবং ইস্তিখারার মাধ্যমে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ও টার্নিং পয়েন্টগুলোতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনের গচ্ছিত কল্যাণ হাসিল করতে উদ্যত হই। দু’একটি ইস্তিখারার সুফল পেয়ে এর নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তুলি। এর মধ্যেই মহান আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপায় ও কল্যাণ নির্ধারন করে রেখেছেন। আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদেরকে ইস্তিখারা করার জন্য মানসিকতা ও তাওফীক দান করুন। আমীন!!

আবু তালিব মোহাম্মাদ মোনাওয়ার।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমাদের মা বোনদের জন্য কিছু প্রশ্ন উত্তর ।

  স্ত্রী: আজকে তোমাকে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।। স্বামী: বল। স্ত্রী: তুমি এত তোমার বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ভাবো কেন। আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আমাদের ছেলে মেয়ের কোন চিন্তা করবার না?? স্বামী: আমি ঘরের বড় ছেলে এটা আমার দায়িত্ব।আর তা ছাড়া মা বাবা আমাকে অনেক কষ্টে মানুষ করেছেন আমি তাকে নিয়ে না ভাবলে কে ভাববে। স্ত্রী: তোমার তো আরো ভাই আছে তারা দেখবে। স্বামী: তাদের স্ত্রীরাও যদি তোমার মত এমন বলে । তাহলে আমার বৃদ্ধা মাকে কে দেখবে?? স্ত্রী: আমি এতো কিছু জানিনা। আমি পারবো না তোমার মায়ের খাটনি খাটতে।আর তোমাকেও দিবো না তোমার মায়ের পিছনে এত টাকা খরচ করতে। স্বামী: আজ থেকে আমি আমার মায়ের পায়ের নিচে ঘুমাবো। তোমার পাশে ঘুমানোর চেয়ে আমার মায়ের পায়ের নিচে ঘুমানো হাজার গুণ শান্তি! স্ত্রী: রাগান্বিত হয়ে!!আজ বুঝলাম তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না!! তোমার সাথে আর সংসার করা যাবে না!! আচ্ছা আরেকটা কথার উত্তর দাও! তুমি আমাকে না তোমার মাকে বেশি ভালোবাসো!!? স্বামী: দুজনকে আমার জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসি!! স্ত্রী: কাকে বেশি! ধরো আমি আর তোমার মা একটা বিপদে পড়েছি! যে কেউ একজনকে বাঁচাতে পারবে!! এখন

স্বামীকে বশ করার হালাল যাদু

অনেকেই অভিযোগ করেন স্বামী তার কথা শুনে না বা পরনারীতে আসক্ত। এজন্যও বিভিন্ন রুকইয়াহও চেয়ে বসেন। কিন্তু আপনি কি জানেন সম্পূর্ণ হালাল ভাবেই আপনি আপনার স্বামীকে যাদু করতে পারেন? এর জন্য দরকার একটু সচেতনতা।  আমাদের সমাজে স্বামী-স্ত্রী অমিলের পিছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতি দায়িত্ব, অধিকার ও ভালোবাসার অভাব কাজ করে। বেশিরভাগ দম্পত্তিই জানেন না তাদের এই “বিবাহ বন্ধনের উদ্দেশ্য কি”। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সূরাতুর রুম এর ২১ নং আয়াতে বলেনঃ “এবং তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে হচ্ছে তিনি তোমাদের মধ্যে থেকে তোমাদের জন্য সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাদের মাঝে প্রশান্তি (সুকুন) খুঁজে পাও এবং তিনি তোমাদের মাঝে দয়া ও ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন।” এই আয়াতে আল্লাহ আমাদেরকে বিয়ের উদ্দেশ্য বলে দিয়েছেন। আল্লাহ আমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন যেন আমরা একে অপরের মাঝে “প্রশান্তি” খুঁজে পাই। এই প্রশান্তি বলতে শারিরীক ও মানসিক দুইধরণের প্রশান্তিকেই অন্তর্ভুক্ত করে। শারিরীক প্রশান্তির কথা সবাইই বুঝি, কিন্তু মানসিক প্রশান্তির ব্যাপারে কতজনই বা সচেতন। আপনি চিন্তা করুন খাদিজাহ বিনতে খুইয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার কথা

মাহারাম এবং গায়রে মাহারাম কারা ?

মাহারামঃ  যে সকল পুরুষের সামনে নারীর দেখা দেওয়া, কথা বলা  জায়েজ এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধন সম্পূর্ণ  হারাম তাদের কে শরীয়তের পরিভাষায় মাহরাম বলে। গায়রে মাহারামঃ  যে সকল পুরুষের সামনে যাওয়া নারীর জন্য শরীয়তে জায়েজ নয় এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধন বৈধ তাদের কে গায়রে মাহরাম বলে। সূরা আন নূরের ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নারীর মাহরাম নির্ধারিত করে দিয়েছেন । সূরা আন নূরের পূর্ণ আয়াতঃ "আর মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই-এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজেদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা