সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইস্তিখারা কি ও এর গুরুত্ব


ইস্তিখারা কি ও এর গুরুত্ব
ইস্তেখারা কাকে বলে? কিভাবে ইস্তেখারার নামায পড়তে হয়?
ইস্তেখারা শব্দের অর্থ : ইস্তেখারা শব্দটি আরবী। আভিধানিক অর্থ, কোন বিষয়ে কল্যাণ চাওয়া।
মুফতি সাঈদ আল হাসান

ইস্তিখারা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। ইস্তেখারা শব্দটি আরবী। আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ কল্যাণ প্রার্থনা বা কোন বিষয়ে কল্যাণ চাওয়া। ইসলামী পরিভাষায়: দুরাকাত নামায ও বিশেষ দুয়ার মাধ্যমে আল্লাহর তায়ালার নিকট পছন্দনীয় বিষয়ে মন ধাবিত হওয়ার জন্য আশা করা। অর্থাৎ দুটি বিষয়ের মধ্যে কোনটি অধিক কল্যাণকর হবে এ ব্যাপারে আল্লাহর নিকট দু রাকায়াত সালাত ও ইস্তিখারার দুয়ার মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার নামই ইস্তেখারা।

হযরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) প্রত্যেক কাজে আমাদের ইস্তিখারা করা সম্পর্কে এমন ভাবে শিক্ষা দিতেন যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের কেউ যখন কোন কাজ করার করবে তখন সে দুরাকাত নফল নামাজ আদায় করবে, এরপর সে পাঠ করবে:

আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্তাখিরুকা বি ইলমিকা ওয়া আস্তাকদিরুকা বি কুদরাতিকা ওয়া আসআলুকা মিনফাদ্বলিকাল আযীম, ফা ইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু, ওয়া তা’লামু ওয়ালা আ’লামু ওয়া আন্তা আল্লামুল গুয়ূব। আল্লাহুম্মা ইনকুন্তা তা’লামু আন্না হাযালআমরা (এখানে নিজের কাজের কথা উল্লেখ করবেন) খাইরুল্লি ফি দ্বীনী ওয়া মাআশীয়ী ওয়া আক্বিবাতি আমরী (অথবা বলবে: আ’ জিলি আমরি ওয়া আজিলিহি) ফাকদিরহু লি ওয়া ইয়াসসিরহু লী সুম্মা বারিকলী ফিহি ওয়া ইন কুনতা তা’লামু আন্না হাযাল আমরা (এখানে নিজের কাজের কথা উল্লেখ করবেন) শাররুল্লী ফী দীনী ওয়া মাআশীয়ী ওয়াআক্বিবাতি আমরী (অথবা বলবে: আ জিলি আমরী ওয়া আজিলীহি) ফাসরিফহু আন্নিওয়াসরীফনি আনহু ওয়াকদির লিয়াল খাইরা হাইসু কানা সুম্মা আরদ্বিনী বিহি।

ইসলামী পরিভাষায় :

দুই রাকাত সালাত ও বিশেষ দুয়ার মাধ্যমে আল্লাহর তায়ালার নিকট দুটি বিষয়ের মধ্যে কল্যাণকর বিষয়ে মন ধাবিত হওয়ার জন্য আশা করা। অর্থাৎ দুটি বিষয়ের মধ্যে কোনটি অধিক কল্যাণকর হবে এ ব্যাপারে আল্লাহর নিকট দু রাকাত সালাত ও ইস্তিখারার দুয়ার মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার নামই ইস্তেখারা। [ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী শরহু সহীহিল বুখারী]

ইস্তেখারা করার হুকুম :

এটি সুন্নাত। যা সহীহ বুখারীর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তবে কেউ কেউ নফল ও বলেছেন।

ইস্তেখারা কখন করতে হয়?

মানুষ বিভিন্ন সময় একাধিক বিষয়ের মধ্যে কোনটিকে গ্রহণ করবে সে ব্যাপারে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। কারণ, কোথায় তার কল্যাণ নিহিত আছে সে ব্যাপারে কারো জ্ঞান নেই। তাই সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য মহান আল্লাহর তাআলার পক্ষ থেকে উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়। যেন তিনি সিদ্ধান্তকে এমন জিনিসের উপর স্থির করে দেন যা তার জন্য উপকারী ও কল্যাণকর হয়।

এই নামাযের নির্দিষ্ট সময় নেই। সাধারণ নফলের হুকুমেই পড়ে এটি।

যেমন: বিয়ে, চাকরী, সফর ইত্যাদি বিষয়ে ইস্তেখারা করতে হয়।

ইস্তেখারা করা কত টুকু সঠিক? শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন:

সে ব্যক্তি অনুতপ্ত হবে না যে স্রষ্টার নিকট ইস্তেখারা করে এবং মানুষের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার উপর অটল থাকে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

আর তুমি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মানুষের সাথে পরামর্শ কর। অত:পর আল্লাহর উপর ভরসা করে (সিদ্ধান্তে অটল থাক)। আল্লাহ ভরসাকারীদের পছন্দ করেন।  [সূরা আলে ইমরান: ১৫৯]

কাতাদা(রহঃ) বলেন:

মানুষ যখন আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পরে পরামর্শ করে তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সব চেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার তাওফীক দেন।

ইমাম নববী রহ. বলেন:

আল্লাহ তায়ালার নিকট ইস্তেখারা করার পাশাপাশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ভাল লোকদের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার। কারণ, মানুষের জ্ঞান-গরিমা অপূর্ণ। সৃষ্টিগতভাবে সে দুর্বল। তাই যখন তার সামনে একাধিক বিষয় উপস্থিত হয় তখন কি করবে না করবে, বা কি সিদ্ধান্ত নিবে তাতে দ্বিধায় পড়ে যায়।

ইস্তেখারা করার নিয়ম:

১) প্রথমে ওযু করতে হবে। 

২) ইস্তিখারার উদ্দেশ্যে দু রাকাত সালাত পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে কতক ওলামায়ে কেরাম প্রথম রাকাতে সূরা কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস পড়তেন। তবে যে কোন সূরা পড়া যাবে। 

৩) নামাযের সালাম ফিরিয়ে আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব, ও মর্যাদার কথা মনে জাগ্রত করে একান্ত বিনয় ও নম্রতা সহকারে আল্লাহর প্রশংসা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দুরূদ পেশ করার পর নিচের দুয়াটি পাঠ করবে: 

اللَّهُمَّ إنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ , وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ , وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلا أَقْدِرُ , وَتَعْلَمُ وَلا أَعْلَمُ , وَأَنْتَ عَلامُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ (………) خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي) أَوْقَالَ : عَاجِلِأَمْرِيوَآجِلِهِ) فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ , اللَّهُمَّ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ(………) شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي (أَوْقَالَ : عَاجِلِأَمْرِيوَآجِلِهِ) فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِي الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ ارْضِنِي بِهِ (……). 

এ দুআর যেখানে “হাজাল আমর অথবা (………) এরকম দেয়া আছে ওখানে পৌঁছে মনে মনে যে কাজটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে সেটি উচ্চারণ করবে আরবীতে বা মনে মনে সে বিষয়টি ভেবে নিবে। 

ইস্তেখারার নামাযের দলিল-

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَلِّمُنَا الاِسْتِخَارَةَ فِي الأُمُورِ كُلِّهَا كَمَا يُعَلِّمُنَا السُّورَةَ مِنَ القُرْآنِ، يَقُولُ: إِذَا هَمَّ أَحَدُكُمْ بِالأَمْرِ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ مِنْ غَيْرِ الفَرِيضَةِ، ثُمَّ لِيَقُلْ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ العَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلاَّمُ الغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعِيشَتِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي، أَوْ قَالَ: فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ، فَيَسِّرْهُ لِي، ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعِيشَتِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي، أَوْ قَالَ: فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ، فَاصْرِفْهُ عَنِّي، وَاصْرِفْنِي عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِي الخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ أَرْضِنِي بِهِ، قَالَ: وَيُسَمِّي حَاجَتَهُ. (سننر الترمذى، رقم الحديث-480

হযরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা:) প্রত্যেক কাজে আমাদের ইস্তেখারা করা সম্পর্কে এমন ভাবে শিক্ষা দিতেন যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের কেউ যখন কোন কাজ করার করবে তখন সে দু রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে, এরপর সে এই দুয়াটি পাঠ করবে।

এটা বলে উপরের দুয়াটি বর্ণনা করেন।  ভাল মন্দের ফায়সালা কিভাবে হবে?

নামাজ শেষ করে কারো সাথে কথা না বলে কিবলামুখী হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। ঘুম থেকে জাগার পর মন যেদিকে সায় দিবে, বা যেদিকে আগ্রহী হয়ে উঠবে, সেটিই ফলাফল মনে করবে। [তুহফাতুল আলমায়ী-২/৩৩৮, বেহেশতী জেওর]


ইস্তিখারার রেজাল্ট কিভাবে বুঝবেন?

এটি একটি কমন ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। রাসুল (সাঃ) আনাস (রাঃ) কে বলেছেন: সাত বার অর্থাৎ পর পর সাতদিন ইস্তিখারা করে মনের গতি ও ঝোঁক যে দিকে যায় তার সিদ্ধান্ত নিতে। কারণ অনেক সময় সরাসরি কোন নির্দেশনা পাওয়া যায়না। তাই না জানার কারণে কনফিউশন থেকে যায়। তাই বিষয়টিকে আরো পরিষ্কার করতে এবং আরো কার্যকর হিসেবে গ্রহণ করতে কিছু টিপস উল্লেখ করলাম। যারা বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত ইস্তিখারা করে সুফল ভোগ করেছেন তাদের সাথে একান্তে আলাপে যা জানা গেল তা পর্যায়ক্রমে উল্লেখ করলাম:

  • আপনি যে বিষয়ে ভাবছেন আপনি স্বপ্নে হুবহু সে বিষয়ের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন কিংবা তা বর্জনমূলক কাজ দেখতে পাবেন এবং এটি সরাসরি আপনার সিদ্ধান্তেই। (এটি হচ্ছে ইস্তিখারার সর্বোচ্চ রেজাল্ট)।
  • অথবা আপনি যা ভাবছেন সে বিষয়ে স্বপ্নে আপনার পরিবারের সদস্যদের কিছু ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক কাজ দেখতে পাবেন।
  • অথবা স্বপ্নে কিছু দেখবেননা কিন্তু আপনার মন যত দিন যায় তত বিষয়টির দিকে ঝোঁকতে থাকে কিংবা তার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হতে থাকে।
  • অথবা এ ব্যপারে আপনার মন স্বাভাবিক এবং নেতিবাচক কিছু আসছেনা। তাহলেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
  • কেউ প্রথম রাতেই রেজাল্ট পেয়ে যান এবং পরে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন। আবার কারো বিলম্বও হয়ে থাকে।
  • আল্লাহ্‌র সাথে আপনার সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে আপনি আরও উচ্চ মানের রেজাল্ট ও পেতে পারেন।

ইস্তিখারার আদব

  • আল্লাহ্‌র প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও ভরসা রেখে ইস্তিখারা করতে হবে।
  • পর পর ন্যুনতম সাত দিন ইস্তিখারা করতে হবে।
  • ইস্তিখারার রেজাল্টের জন্য ধৈয্য সহকারে অপেক্ষা করতে হবে। আল্লাহ্‌ আপনাকে সহযোগিতা করবেন এটা মনে রাখলে আরো সহজ হবে।
  • ইস্তিখারা করার সময় আপনার বিষয়ে আপনাকে নিউট্রেল হতে হবে এই অর্থে যে আপনি যা রেজাল্ট পাবেন সে অনুযায়ী কাজ করার মানসিকতা রাখেন এবং এর মধ্যেই কল্যাণ মনে করেন।
  • ইস্তিখারার রেজাল্ট পেতে বিলম্ব হলে রেজাল্ট পাবেননা এমনটা ভেবে নিরাশ হওয়া যাবেনা।
  • ইস্তিখারার রেজাল্ট পেলে বিশেষ ব্যক্তি কিংবা বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অন্যের কাছে বলা ঠিক নয়। কারণ এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌র উপর আপনার তাওয়াক্কুল বাড়ছে এবং ধীরে ধীরে আল্লাহ্‌র সাথে আপনার সম্পর্ক নিবিড় হচ্ছে। আর তাই এমন গোপন বিষয়টা অহেতুক ফাঁস করলে আপনার ইবাদতের মান কমে যাবে এবং নিজের ব্যপারে উচ্চ ধারণা হেতু অহংকার প্রকাশের সম্বাবনা আছে। তাছাড়া এটি আপনার কাজের জন্য দৃঢ় একটি সমর্থক এবং আপনার মনোবলকে দৃঢ় করতে সহকারী। কিন্তু অন্য মানুষের জন্য এটি অকাট্য কিছু নয়। তবে তাদের কাছেই বলবেন যারা আপনাকে জানেন এবং বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আপনাকে আপনার উদ্দৃষ্ট কাজে সহযোগিতা করতে পারেন।
  • নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি রেজাল্ট না পাওয়া যায় তাহলে আল্লাহ্‌ আপনাকে দিতে পারেন এই ধারণাকে আরো প্রবল করে কিছু দিন পর একই নিয়মে আবার চেষ্টা করুন। ইনশা আল্লাহ্‌ আপনি নিরাশ হবেননা।

রিফলেকশন:

  • আসলে ইস্তিখারার বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ্‌র সাথে ব্যক্তির সম্পর্কের উপর ভিত্তি করেই হয়ে থাকে। বিষয়টি আল্লাহ্‌র সাথে একান্ত আপনার নিজের। তাই পূর্ণ স্কেলে পরিমাপ আপনিই করতে পারবেন। তবে আল্লাহ্‌র সাথে আপনার বর্তমান সম্পর্ক বেশী ভালো নয় এটা ভেবে ইস্তিখারা থেকে দূরে থাকলে আপনি অপসিদ্ধান্তে ভোগবেন। তাই ইস্তিখারার মাধ্যমেই আল্লাহ্‌র সাথে আপনার সম্পর্ক সৃষ্টি করুন এবং পরিমাপ করুন।
  • আপনার ঈমান, বর্তমান তাওয়াক্কুল এবং আল্লাহ্‌র সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে খুব কম সময়ে খুব স্পষ্ট রেজাল্ট কিংবা কিছু বিলম্বে তুলনামূলক কম স্পষ্ট রেজাল্ট পাবেন। এজন্য প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রাখতে হবে। এতেই আপনার কল্যান নিহিত।
  • আপনি যদি একবার ইস্তিখারা রেজাল্ট পান তাহলেই আপনি এর স্বাদ আস্বাদন করবেন এবং এর পর যে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজেই ইস্তিখারা করতে আপনার মন চাইবে।
  • ইস্তিখারার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র সাথে বান্দার সম্পর্ক নিবিড় হয় এবং ঈমান ও তাওয়াক্কুল বেড়ে যায়। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেছেন: “মুমিন ব্যক্তিদের আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা উচিৎ”।[১৪:১২] তিনি আরো বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র উপর তাওয়াক্কুল করে তিনি তার জন্য যথেষ্ট।[৬৫:৩]
  • এই ইস্তিখারার সুফল একে বারেই নিশ্চিত। শুধু গ্যারান্টির জন্য প্রয়োজন আপনার প্র্যাকটিস।

 আপনার সিদ্ধান্ত:

আসুন! আমরা মহান আল্লাহ্‌র কাছে আমাদের প্রয়োজন মেটাতে একটু ধরনা দেই। আমাদের নিজেদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আল্লাহ্‌র কাছে ইস্তিখারা করতে শিখি এবং ইস্তিখারার মাধ্যমে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ও টার্নিং পয়েন্টগুলোতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীনের গচ্ছিত কল্যাণ হাসিল করতে উদ্যত হই। দু’একটি ইস্তিখারার সুফল পেয়ে এর নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তুলি। এর মধ্যেই মহান আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপায় ও কল্যাণ নির্ধারন করে রেখেছেন। আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদেরকে ইস্তিখারা করার জন্য মানসিকতা ও তাওফীক দান করুন। আমীন!!

আবু তালিব মোহাম্মাদ মোনাওয়ার।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সাহাবাদের ২৫ টি প্রশ্ন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উত্তর।

  সাহাবাদের ২৫ টি প্রশ্ন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উত্তর। ১. প্রশ্নঃ আমি ধনী হতে চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, অল্পতুষ্টি অবলম্বন কর; ধনী হয়ে যাবে। ২. প্রশ্নঃ আমি সবচেয়ে বড় আলেম (ইসলামী জ্ঞানের অধিকারী) হতে চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, তাক্বওয়া (আল্লাহ্ ভীরুতা) অবলম্বন কর, আলেম হয়ে যাবে। ৩. প্রশ্নঃ সম্মানী হতে চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, সৃষ্টির কাছে চাওয়া বন্ধ কর; সম্মানী হয়ে যাবে। ৪. প্রশ্নঃ ভাল মানুষ হতে চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, মানুষের উপকার কর। ৫. প্রশ্নঃ ন্যায়পরায়ণ হতে চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, যা নিজের জন্য পছন্দ কর; তা অন্যের জন্যেও পছন্দ কর। ৬. প্রশ্নঃ শক্তিশালী হতে চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, আল্লাহর উপর ভরসা কর। ৭. প্রশ্নঃ আল্লাহর দরবারে বিশেষ মর্যাদার অধিকরী হতে চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, বেশী বেশী আল্লাহকে স্মরণ (জিকির) কর। ৮. প্রশ্নঃ রিযিকের প্রশস্ততা চাই! উঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, সর্বদা অযু অবস্থায় থাকো। ৯. প্রশ্নঃ আল্লাহর কাছে সমস্ত দোয়া কবুলের আশা করি! উঃ রাসূলুল্লাহ ...

দাম্পত্য সম্পর্কের ৫০ টি বিষয় যা আপনার জেনে রাখা প্রয়োজন

১. সুন্দর সম্পর্ক নিজে থেকেই তৈরি হয় না, সেটি তৈরি করতে হয়। তাই আপনাকেও সেটি তৈরি করতে হবে। ২. কর্মক্ষেত্রেই যদি আপনার সবটুকু কর্মক্ষমতা নিঃশেষ করে ফেলেন, তাহলে আপনার দাম্পত্য জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ৩. আপনার উৎফুল্ল আচরণ হতে পারে আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীর জন্য খুব দামি একটি উপহার। ৪. কাউকে একইসাথে ভালোবাসা এবং ঘৃণা করা আপনার জন্য অসম্ভব নয়। ৫. আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীর ব্যাপারে বন্ধুদের কাছে অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখবেন বন্ধুদের প্রতিক্রিয়া আপনার দাম্পত্য সম্পর্কে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ৬. দাম্পত্য জীবনে তা-ই নিয়ম যা দুইজনের পছন্দের ভিত্তিতে ঘটে। ৭. সাময়িক ঝগড়া বিবাদের কারণে দাম্পত্য সম্পর্ক পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় না। মনের মধ্যে জমে থাকা চাপা ক্ষোভ আর যন্ত্রণাই দাম্পত্য জীবনকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়। ৮. দাম্পত্য সম্পর্ক, “কী পেলাম?” –এর হিসেবে মেলানোর জন্য নয়। বরং সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে “কী দিতে পেরেছি,” তা-ই দাম্পত্য সম্পর্কের মূলকথা। ৯. “জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনী হিসেবে আমি সর্বোত্তম”-এমনটি মনে হওয়া অতি আত্মবিশ্বাসের লক্ষণ। এমনটি মনে হলে নিজেক...