সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নফস কি নফস কতপ্রকার এবং রূহের সাথে নফসের পার্থক্য এবং নফসের আত্মসুদ্ধির উপায় সমুহ এবং কিছু পরামর্শ

নফস কি নফস কতপ্রকার এবং রূহের সাথে নফসের পার্থক্য এবং নফসের আত্মসুদ্ধির উপায় সমুহঃ

নফস বলে আমরা কি বুঝিঃ


মানব দেহের মোকাম সমুহের মধ্যে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপুর্ন মোকামটির নাম হল 'নফস'। যাহা দেহ ও রুহের মধ্যে ক্রিয়া সম্পাদনকারী। যাহা চোখে দেখার বস্তু নয়, অনুভবেই তার অস্তিত্ব। যাহা মানবদেহে 'আমি' রুপে পরিচিত।
এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, "অবশ্যই সফলকাম হয়েছে সে ব্যক্তি, যে নিজেকে (নফস বা আত্মা) পরিশুদ্ধ করেছে। আর বিফল কাম হয়েছে সেই ব্যক্তি যে নিজেকে পাপাচারে কুলষিত করেছে" (সুরা আশ সামস: ০৯-১০)
রাসুল সাঃ বলেছেন, "যে তার নফসকে চিনলো, সে তার রবকে চিনলো"।
নফসই হল মানব দেহের সমস্ত কিছুর মূল। যে নফসের মধ্যে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার ক্রিয়া বীজ রুপে লুকায়িত রয়েছে, তাঁকে খুজে বাহির করার নামই হল নিজেকে চেনা। নফসের পরিচয়ে এর বেশি প্রয়োজন হবেনা বলে আশা করছি।

নফসের প্রকারভেদঃ


আশরাফুল মাখলুকাত শ্রষ্ঠার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি আদম জাতের শরীরে মধ্যে কয়েকটি মোকাম আছে যা আল্লাহ্‌ তালার রহমত, বরকত, ফয়েজ ও নূর দ্বারা পরিপূর্ণ।
উক্ত মোকাম সমূহের মধ্যে নফস একটি যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যে ব্যক্তি তার নফসকে পরিশুদ্ধ করেছে সেই সে রহমত বরকত লাভ করেছেন। আল্লাহপাক কোরআনে এরশাদ করেন-
"অবশ্যই সফলকাম হয়েছে সে ব্যক্তি, যে নিজেকে (নফস বা আত্মা) পরিশুদ্ধ করেছে; আর বিফল কাম হয়েছে সেই ব্যক্তি যে নিজেকে পাপাচারে কুলষিত করেছে"।
আর তাই নফসের বিভিন্ন অবস্থানের উপর ভিত্তি করে একে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
(১) নফসে আম্মারা
(২) নফসে লাওয়ামা
(৩) নফসে মুৎমায়েন্না
(৪) নফসে মুলহেমা
(৫) নফসে রহমানী।

১। নফসে আম্মারা


মানস মহাসাগরে স্মৃতিজলে কামরুপে কুমির নিহিত, প্রেমাগ্নির জলন্ত শিখায় দুর্বল চিত্ত আত্মরূপ মানুষের ধর্ম কর্ম সাধনা বিনাশ করে দেয়। এগুলিকেই এক কথায় নফসে আম্মারা বলা হয়েছে।
ইন্না নাফছা লা আম্মারাতুম বিচ্ছুয়ে ইল্লামা রাহেমা রাব্বি (১২ঃ৫৩)।
অর্থ - নিশ্চই নফসে আম্মারা বদ কাজ করায়, যাদের আমার প্রভূ রহমত করেন তাদের ছাড়া।

২। নফসে লাওয়ামা

লাউকছেমু বে ইয়াওমুল কিয়ামা অলা উফছেমু বেন্নাফছে লাওয়ামা (৭৫ঃ১/২)
অর্থ - আমি কসম করছি কেয়ামত দিবসের আরও কসম করছি (সেই আত্মার যে নিজেকে তিরস্কার করে থাকে) নফসে লাওয়ামার।
তিরস্কারকারী আত্মাই হল নফসে লাওয়ামা এবং কেয়ামতের সংশ্রবে নফসে লাওয়ামা বলার তাৎপর্য হলো মৃত্যুর পর যে আত্মার হিসাব নিকাশের জন্য পুনরুত্থ্যান। তাই কিয়ামত। নফসের প্রথম উত্থ্যান হল নফসে লাওয়ামতে পৌছানো যা কিনা নফসে আম্মারার পতন। এই অবস্থায় নফসে আম্মারার তাবে হঠাৎ পাপ কার্য করে ফেললেও অনুতাপের অন্ত থাকে না।

৩। নফস মুৎমায়েন্না


ইয়া আইয়াতুহান্নাফছুল মুৎমায়েন্না তুরজিই ইলা রাব্বেক রাজিয়াতাম মারজিয়া ফাদখুলি এবাদি অ আদখুলি জান্নাত (৮৯ঃ২৭-৩০) ।
অর্থ - হে প্রশান্ত আত্মা (নফসে মুৎমায়েন্না, পুরো শুদ্ধির কারণে শান্তি প্রাপ্ত আত্মা)! তুমি তোমার রবের কাছে ফিরে এস এমনভাবে যে, তুমি তার প্রতি সন্তুষ্ট এবং তিনি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট; অত:পর তুমি শামিল হয়ে যাও আমার বিশিষ্ট বান্দাদের (পয়গাম্ভর অলী, আবদাল, গাউছ, কুতুব, মুজাদ্দেদ, মুজাহীদ) মধ্যে, এবং প্রবেশ কর আমার জান্নাতে।

৪। নফস মুলহেমা


আন্নাফছে অমা দাওয়াহা ফা আল হামাহা ফাজুরাহা অ আক্বওয়াহা (৯১ঃ৭.৮)।
অর্থ - কসম মানুষের আত্মার এবং যিনি তাকে আকৃতিতে সুঠাম করেছেন, অত:পর তাকে তার মন্দকর্ম ও তার তাক্‌ওয়ার জ্ঞানদান করেছেন।
অর্থাৎ বলা যায় যে, কোনটা পাপ সুতরাং তা পরিত্যাগ করতে হবে কোনটা পূর্ণ যা গ্রহণ করতে হবে। তা তিনি তার প্রিয়তম রহমানুর রাহিমের তরফ থেকে এলহাম অনুপ্রেরণা যোগে জেনে শুনেই করেন। যা সাধারনের গন্ডির পাপ পূর্ণের বিচারের উর্ধ্বে। খিজির (আঃ) হযরত মূসা নবীকে-
আমি নিজের ইচ্ছায় কিছুই করিনি; এই ইচ্ছে যাতে তুমি ছবর করতে পারনি তারতাবীল।
উপরের ঘটনার দিকে দৃষ্টি পাত করলে আমরা পরিস্কার দেখতে পাই যে, যারা আল্লাহ্‌র সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে তারা তার এলহামের অনুপ্রেরণা যোগে জেনে শুনেই করেন। যা সাধারনদের আপাতদৃষ্টিতে বোধগম্য না হলেও তা কল্যাণময়।

৫। নফসে রহমানী


নফসে মূলহেমা পাকা কায়েম দায়েম হলেই সম্ভবপর হয় নফস রহমানী। একেবারে রহমানুর রাহিমের খাছলত হাসেল হলেই বলা যাবে নফসে রহমানী।
তাখাল্লাকু বে আখলাকিল্লাহ্‌ (হাদীস একারনেহ্‌)।
অর্থ - আল্লাহ্‌র গুনে গুণান্নীত, আল্লাহ্‌র জ্ঞানে জ্ঞানান্নীত, আল্লাহ্‌ র শানে শানান্নীত হও।
কোরানে আল্লাহ্‌পাক বলেন-
ছিবগ্বাতাল্লাহ আমান আহছানু মিনালাহি ছিবগ্বাতাউ অনাহুনু লাহূ আ-বিদুন (২ঃ১৩৮)।
অর্থ - আমরা গ্রহণ করলাম আল্লাহ্‌র রং। আল্লাহর রং এর চেয়ে উত্তম রং আর কার হতে পারে? আর আমরা তারই ইবাদত করি।
তাই আমাদের সবার উচিত উত্তম চরিত্র গঠন করা।
লাকদ খলাকনাল ইনসানা ফি আহসানি তাকুইন (৯৫ঃ৪)।
অর্থঃ আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি অতিশয় সুন্দর গঠনে।
তবে যদি কেউ এই রহমানুর রাহিমের খাসালত ধারন করতে পারে সেই পূর্ণময় সর্বোত্তম।
মানুষের ভেতরে দুটো সত্ত্বা রয়েছে। যেমন—জীবাত্মা ও পরমাত্মা। জীবাত্মাকে ‘নফস’ এবং পরমাত্মাকে ‘রুহ’ বলা হয়েছে। নফস ও রুহের কর্মসূচি আলাদা। মানুষের স্বভাবে যখন নফসের প্রভাবটা বেশি থাকে তখন রুহের কাজ প্রকাশ পায় না। জগত সংসারে এই নফসের বেড়াজালে পড়ার কারণেই যত সব অঘটন ঘটে। রিপুর তাড়নায় মানুষ গর্হিত পাপ করে। ইবাদতে তাদের মন বসে না। ধর্মের কথা শুনতে অস্বস্তি লাগে। মন নেচে ওঠে জগতের শত নাজ নেয়ামতের পরশে। নফসের তাড়না একধরনের আত্মিক রোগ। দেহের যেমন রোগ হয়, আত্মারও তেমনি রোগ আছে। কলব বা আত্মার এই রোগ না সারাতে পারলে মানবজীবনই বৃথা। তাইতো সুফিসাধকগণ নফসের পরিশুদ্ধতার শিক্ষা দেন। মানুষের কলবের দুটি মুখ রয়েছে। একটি নফসের দিকে, আর অপরটি রুহের দিকে। জীবাত্মা যতক্ষণ কুরিপুর তাড়নাযুক্ত থাকে ততক্ষণ সে থাকে রুহের প্রতি অমনোযোগী। এ অবস্থায় জীবাত্মা স্বেচ্ছাচারী হয়। তখন রুহের কোন নির্দেশ তার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে না। সাধনার মাধ্যমে এরূপ স্বেচ্ছাচারী জীবাত্মা যখন রূহের প্রতি মনযোগী হয়, তখন তার খেয়াল থাকে কলবের ভেতরের দিকে। ফলে কলবের প্রথম স্তরে অবস্থিত কুুরিপুসমূহ এই জীবাত্মার উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না, তখন সে শয়তানের কুমন্ত্রণা মুক্ত হয়। কলব সূক্ষ্ম সৃষ্টি জগতের রহস্যময় এক মহাসমুদ্র। সূক্ষ্ম জগত্ স্তরে স্তরে এই কলবের ভেতর অবস্থান করে। মানুষের জীবাত্মা তার কলবের বাইরের অঙ্গের সঙ্গে যুক্ত। আর মানবাত্মা এর ভেতরের স্তর সমূহের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জগতের সকল কিছুর মতো কলবেরও জাহের এবং বাতেন আছে। কলবের ভেতরে ডুবে গিয়ে মহানসাধক হযরত মনসুর হাল্লাজ (রহ.) নিজেকে বলেছেন ‘আনাল হক’।

আল্লাহ বলেন, “আদমের ভেতর আমার (আল্লাহ) রুহ ফুঁকে দিলাম” (আল হিজর : ২৯)।
আরও বলেন, “আমি তোমাদের দিলে অবস্থান করি, তোমরা কি দেখ না” (আল জারিয়াত : ২১)।
অন্যত্র বলেন, “আমি তার ঘাড়ের চেয়েও অধিক নিকটে” (ক্বাফ : ১৬)।
এরশাদ হয়েছে, “আর তোমরা যেখানে থাকো, তিনি তোমাদের সাথে আছেন। তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তা দেখেন” (হাদীদ : ৪)।

নফস মানে ইচ্ছাশক্তি। রিপুযুক্ত ইচ্ছা মানুষকে পাপের দিকে ধাবিত করে। পক্ষান্তরে রিপুমুক্ত ইচ্ছা সাধককে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছতে সাহায্য করে। একজন সাধকের জন্য আপন নফসের সঙ্গে যুদ্ধ করাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ইবাদত। এক যুদ্ধ থেকে ফেরার সময় হযরত রসূল (স.) সাহাবাদের লক্ষ করে বললেন, আমরা ছোট যুদ্ধ থেকে বড় যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছি। সাহাবাগণ আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ (স.)! যে যুদ্ধে পিতা-মাতা, আদরের সন্তান ও স্ত্রী এবং নিজের জানমাল কুরবান করতে হয় এর চেয়ে বড় যুদ্ধ কী?

নবীজি (স.) বললেন, “নফস বা কুপ্রবৃত্তির বিরোধীতা করাই শ্রেষ্ঠ জিহাদ।” (ইসলাম শিক্ষা, নবম শ্রেণী, পৃ : ৫৪)। ধর্মের মূল শিক্ষাই হলো নফসের পরিশুদ্ধতা লাভ করা। নফসকে পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত রেখে সুন্দর পোশাক পরে এবাদতে দাঁড়িয়ে কোন লাভ নেই। সবার আগে চাই পরিশুদ্ধ অন্তকরণ ও আল্লাহর নিকট কাকুতি মিনতি।

হযরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করিম (স.) বলেন, তোমরা নামাজে এ দোয়া পড়-“হে আল্লাহ! আমি আমার নফসের উপর অত্যাধিক জুলুম করেছি, অথচ আপনি ছাড়া আমার গুনাহসমূহ মাফ করার কেউই নেই। সুতরাং আমাকে সম্পূর্ণরূপে মাফ করে দিন। নিশ্চয়ই আপনি অধিক ক্ষমাপরায়ণ ও দয়াবান” (বুখারী: ৬৮৮৪)। মানুষ গভীর সাধনার মাধ্যমে নিজের নফসের পরিচয় লাভ করার সাথে সাথে আল্লাহর পরিচয়ও লাভ করতে সক্ষম হয়। কারণ নফসের মধ্যে তখন আল্লাহপাকের প্রকাশ ঘটে।

রসূল (স.) বলেন, “যে ব্যক্তি নিজেকে চিনতে সক্ষম হয়েছে, সে তার প্রভুর পরিচয় জ্ঞান লাভ করেছে” (সেররুল আসরার, পৃ: ৫৯)।

আল্লাহ বলেন, “হে মানুষ! তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট পৌঁছানো পর্যন্ত সাধনা করতে থাক। অতঃপর তুমি তাঁর সাক্ষাত্ লাভ করবে” (আল ইনশিকাক: ৬)। মানুষ তার প্রতিপালককে দেখবে বিচার দিবসে। কিন্তু মোমেন বান্দা দুনিয়ার জমিনেও তাঁকে অভিভাবকরূপে পাবে।

হযরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত নবী করিম (স.) বলেছেন, “অবশ্যই তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে প্রকাশ্যভাবে দেখতে পাবে” (বুখারী শরিফ:৬৯২৯)।

তিনি আরও বলেন, নবীজি (স.) পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোমরা অচিরেই তোমাদের প্রভূকে এমনভাবে দেখতে পাবে, যেমনি তোমরা এই চাঁদটিকে দেখতে পাচ্ছ। এ চাঁদ দেখাতে তোমাদের কোন কষ্ট হচ্ছে না” (বুখারি : ৬৯২৮)।

নফস যদি পাপ কালিমায় ভরপুর থাকে তবে পর্বত সমান ইবাদতও মূল্যহীন। নফস রীপুর বেড়াজালে দুষিত হলে সবই বরবাদ হয়ে যায়। তাইতো আল্লাহ বলেন, “আর আমিই সৃষ্টি করছি মানুষ এবং আমি জানি তার প্রবৃৃত্তি তাকে কি কুমন্ত্রণা দেয়” (সূরা ক্বাদ : ১৬)।

কাজেই নফসের পবিত্রতা অর্জন সাধকের জন্য অনস্বিকার্য। জীবাত্মা বা নফসকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছার জন্য খাঁটি অলীআল্লাহর পরামর্শ গ্রহণ করা আবশ্যক। মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রহ.) বলেন, “তোমরা যদি মাওলার পরিচয় লাভ করতে চাও, তবে অলীআল্লাহর সান্নিধ্য লাভ কর।” তাই সাধকের উচিত আত্মশুদ্ধির চর্চা অব্যাহত রেখে স্রষ্টাতে বিলিন হওয়ার চেষ্টা করা।

এলহাম কার উপর আসেঃ

এক কথায় যদি বলতে হয় তবে বলবো এলহাম সে সমস্ত বান্দার কাছে আসে যার বা যাদের সাথে প্রভূর সাথে সুসম্পর্ক আছে। এজন্য নবী পাক বলেছিলেন, আল্লাহর সাথে সুসম্পর্ক না করে কবরে এসোনা।
এলহাম সবার কাছে আসবেনা, পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের শক্তি সমূহ যখন আপনার মাঝে পরিশুদ্ধতা অর্জন করে তখনই আপনার মাঝে এলহাম আসবে। এজন্য আপনার নফসকে মোলহেমা পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। এজন্য আপনাকে পার হয়ে যেতে হবে ১)নফসে আম্মারা ২)নফসে লাউয়ামা এবং ৩) নফসে মুৎমায়েন্না পার হয়ে ৪) নফসে মোলহেমা বা এলহাম যুক্ত নফসে উন্নতি হলেই আপনার প্রতি এলহাম আসে।
নফসের এ খেলা বড়ই শক্তিশালী তবে আপনাকে এ খেলায় বা যুদ্ধে জয়ী হতে হবে।তবেই আত্মা হতে পরিশুদ্ধ হতে পারবে।
একাকী এ স্তরগুলো পার করা বড়ই কঠিন বিষয়। বিশেষ করে লাউয়ামা নফসে উন্নতি হতে নফসে আম্মারাকে আপন বশে এনে লাউয়ামায় আসতে হয়। এ লাউয়ামা নফসই আত্মশুদ্ধির জন্য আপন দেহে সবসময় যুদ্ধ চালায় অনুতপ্ত তওবা আর গুরু নির্দেশিত কর্মযোগের মাধ্যমে।
লাউয়ামা নফস অতিক্রম করেই নফসে মুৎমায়েন্নায় যেতে হয়। প্রতিটি নফসই আপনাকে নিজ নিয়ন্ত্রণে এনে তাদেরকে শুদ্ধতা বাহন করে এগিয়ে যেতে হবে।
মূলত নফসে মুৎমায়েন্না এলহাম উপযুক্ত হয় কিন্তু যে নফস প্রভূর হুকুম ছাড়া এক মূহুর্ত চলেনা সে নফসই মোলহেমা নফস। অর্থাৎ এলহাম প্রাপ্ত নফস।
আর এ স্তরে যেতে সাধনার কোনও বিকল্প নেই। সাধনা আপনার ব্যাক্তিগত জীবন যাপনে সবসময় থাকতে হবে। তবে একজন আত্মজ্ঞানী কামেল মোর্শেদ আপনাকে এ সম্পর্কে ভাল শিক্ষা দিতে পারবেন। তার কাছে স্মরণাপন্ন হতে হবে।

নফস ও রূহের মধ্যে পার্থক্যঃ

রূহ ও নফসের মধ্যে প্রকৃত অর্থে কোন পার্থক্য নেই। যদিও পারিভাষিক অর্থে পার্থক্য আছে। যেমন প্রাণীকে ‘নফস’ বলা হয়। কিন্তু ‘রূহ’ বা আত্মা বলা হয় না। আল্লাহ বলেন, প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে(আলে ইমরান ১৮৫)। এতে বুঝা যায় যে, দেহ ও আত্মার মিলিত সত্ত্বাকে ‘নফস’ বলা হয়। আর শুধুমাত্র আত্মাকে ‘রূহ’ বলা হয়। একদা ইহূদীগণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে নবী! তুমি বল, রূহ হ’ল আল্লাহর একটি আদেশ’ (ইসরা ১৭/৮৫)। যার প্রকৃতি মানুষের জ্ঞানের বাইরে। এমনকি আম্বিয়ায়ে কেরামও এর প্রকৃতি জানতেন না (শাওকানী, যুবদাতুত তাফসীর, ইসরা ৮৫ আয়াতের ব্যাখ্যা)। আর নফস সেটাই, যা আল্লাহ মানব দেহে ফুঁকে দিয়েছেন। মৃত্যুর সময় যা দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই যখন রূহ কবয করা হয়, তখন তার চোখ তা দেখতে থাকে’ (মুসলিম হা/৯২০; মিশকাত হা/১৬১৯ ‘জানায়েয’ অধ্যায়)। অন্য হাদীছে এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা কি দেখনি যে, মৃত্যুর সময় মানুষের চোখ তাকিয়ে থাকে? ছাহাবায়ে কেরাম বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি বললেন, ‘তা তো ঐ সময় যখন তার চোখ তার নফসকে দেখতে থাকে’ (মুসলিম হা/৯২১)।

নফসের আত্মশুদ্ধি অর্জনের উপায় সমুহঃ

নফসের পরিশুদ্ধকরণের মাধ্যমেই আত্মশুদ্ধি ও মু্ক্তি অর্জন সম্ভব।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরানে বলেছেন-
“তোমরা তোমাদের নফসকে হত্যা করো (কুপ্রবৃত্তি দমন করো), তোমাদের স্রষ্টার নিকট ইহাই শ্রেয়।”
[সূরাঃ বাকারা, আয়াত নং- ৫৪]
অবশ্যই সে সফলকাম হবে, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করবে এবং নিশ্চয়ই সে ব্যর্থ হবে, যে নিজেকে
কলুষিত করবে।
[সূরাঃ শামস, আয়াত নং- ৯,১০]
আত্মশুদ্ধি, আত্মউন্নয়ন ও সফলতার ছয়টি উপায় :
‘আত্মশুদ্ধি’ বা ‘তাজকিয়াতুন নাফস’ শব্দগুলো শুনলেই আমরা মনে করি এগুলো পীরপন্থীদের কথা। অথচ কোর’আনে আত্মশুদ্ধি ও আত্মউন্নয়নের অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, এবং এর উপায়গুলোও শিখিয়ে দেয়া হয়েছে।
আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব সম্পর্ক আল্লাহ তায়ালা বলেন –
وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا - فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا - قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا - وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا
“শপথ নফসের এবং যিনি এটিকে সুবিন্যস্ত করেছেন। তিনি নফসকে অসৎকর্ম এবং সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। যে ব্যক্তি তার নফসকে পবিত্র করবে, সে সফলকাম হবে। এবং যে ব্যক্তি তার নফসকে কলুষিত করবে, সে ব্যর্থ হবে”। [সূরা ৯১/ শামস – ৭,৮,৯,১০]
আত্মশুদ্ধি হলো দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করার উপায়। যিনি নিজের নফসের উন্নয়ন করতে পারবেন না, তিনি দুনিয়া ও আখিরাতের সকল কাজেই ব্যর্থ হবেন।
এবার, কোর’আনের আলোকে আত্মশুদ্ধি ও আত্মউন্নয়নের উপায়গুলো দেখে নেয়া যাক।
১। প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করার মাধ্যমে আত্মসচেতন ও জাগ্রত হওয়া।
আল্লাহ তায়ালা বলছেন –
وَاذْكُر رَّبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ الْغَافِلِينَ
“তুমি তোমার প্রতিপালককে বিনীত ও সংকোচে, অনুচ্চস্বরে, সকালে ও সন্ধ্যায় তোমার নফসের মাধ্যমে স্মরণ করবে। আর তুমি উদাসীন হবে না।” [সূরা ৭/ আরাফ - ২০৫]
আমাদের মন যখন উদাসীন হয়ে যায়, অথবা, আমরা কোনো কাজ করতে গেলে যখন বারবার ভুল করি, তখন বুঝতে হবে যে, আমাদের নফসে সমস্যা রয়েছে। নফসের এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার উপায় হলো, প্রতি মুহূর্তে মনে মনে কিংবা অল্প আওয়াজে আল্লাহর জিকির করা। আমরা যতবেশি আল্লাহর জিকির করবো, ততবেশি নিজের সম্পর্কে মনোযোগী হতে পারবো। এবং যতবেশি নিজের প্রতি ও নিজের কাজের প্রতি মনযোগী হতে পারবো, ততবেশি সফল হতে পারবো।
২। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাসী হওয়া।
আল্লাহ তায়ালা বলছেন –
وَلَقَدْ آتَيْنَا لُقْمَانَ الْحِكْمَةَ أَنِ اشْكُرْ لِلَّهِ ۚ وَمَن يَشْكُرْ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ
“আমি লোকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছিলাম যাতে সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে পারে। যে ব্যক্তি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে নিজের নফসের জন্যেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর কেউ যদি অকৃতজ্ঞ হয়, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত ও প্রশংসার্হ।” [সূরা ৩১/ লুকমান - ১২]
পৃথিবীতে আত্মবিশ্বাসী মানুষেরাই কেবল সফল হতে পারে। আত্মবিশ্বাসী মানুষ হবার প্রধান শর্ত হলো, নিজের প্রতি নিজে সন্তুষ্ট হওয়া এবং অন্য মানুষদের সাথে অহংকার ও হিংসা না করা। কিন্তু, নিজের প্রতি সন্তুষ্ট হবার প্রধান শর্ত হলো, জীবনের প্রতিটি কাজে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
নিজের উপর আত্মবিশ্বাসী হবার জন্যে এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জ্ঞান ও প্রজ্ঞার। আত্মশুদ্ধি ও আত্মউন্নয়নের দ্বিতীয় ধাপ হলো, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে নিজের প্রতি নিজের আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করা।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যিনি যতো বেশি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে পারেন, তিনি ততবেশি আত্মবিশ্বাসী হতে পারেন, এবং তিনি ততবেশি সফল হতে পারেন।
৩। আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী সত্য পথের অনুসন্ধান করা।
আল্লাহ তায়ালা বলছেন –
إِنَّا أَنزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ لِلنَّاسِ بِالْحَقِّ ۖ فَمَنِ اهْتَدَىٰ فَلِنَفْسِهِ ۖ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا ۖ وَمَا أَنتَ عَلَيْهِم بِوَكِيلٍ
“আমি আপনার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি মানুষের কল্যাণকল্পে। অতএব, যে সৎপথ অবলম্বন করে, সে তা নিজের নফসের জন্যেই তা করে। আর, যে পথভ্রষ্ট হয়, সে নিজের নসফকেই পথভ্রষ্ট করে। আপনি তাদের জন্যে দায়ী নন”। [সূরা ৩৯/ যুমার – ৪১]
সত্য মানে স্থায়ী, এবং মিথ্যা মানে অস্থায়ী। আমরা যদি কোর’আন অনুযায়ী সত্যের পথের অবলম্বন করি, তাহলে আমাদের প্রতিটি কাজ দুনিয়া ও আখিরাতে স্থায়ী হবে। কিন্তু আমরা যদি মিথ্যার পথ অবলম্বন করি, তাহলে আমারদের প্রতিটি কাজ বৃথা হয়ে যাবে।
নিজেদের সফলতার জন্যেই আমাদেরকে সৎ পথ অবলম্ব করা উচিত এবং যাবতীয় মিথ্যা ও অসৎ উপায় থেকে বেঁচে থাকা উচিত।
৪। আত্মউন্নয়নের জন্যে নিয়মিত সাধনা ও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
আল্লাহ তায়ালা বলছেন –
وَمَن جَاهَدَ فَإِنَّمَا يُجَاهِدُ لِنَفْسِهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَغَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ
“যে সাধনা করে, সে তো নিজের নফসের জন্যেই সাধনা করে। আল্লাহ তো বিশ্বজগত থেকে অমুখাপেক্ষী।” [সূরা ২৯/ আনকাবুত – ৬]
অনেকে মনে করেন, আত্মশুদ্ধি বা আত্মউন্নয়নের জন্যে কেবল আল্লাহর জিকির করলেই হয়, কোনো ধরণের পরিশ্রম বা সাধনা করতে হয় না। কিন্তু, আল্লাহ বলছেন, আত্মউন্নয়নের জন্যে অনেক সাধনা ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
আমরা পৃথিবীতে যতই যুদ্ধ-সংগ্রাম ও প্রচেষ্টা করি না কেনো, তা দিয়ে আল্লাহর কোনো লাভ নেই। মূলত আমাদের নিজেদের আত্মউন্নয়নের জন্যেই আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যাবতীয় যুদ্ধ-সংগ্রাম ও সাধনা করতে বলেছেন।
৫। নিজের কাজ নিজে করা, অতিরিক্ত কাজের বোঝা না নেওয়া, এবং নিজের ভুলগুলো নিয়মিত সংশোধন করার মাধ্যমে নিজের দক্ষতা উন্নয়ন করা।
আল্লাহ তায়ালা বলছেন –
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۚ وَإِن تَدْعُ مُثْقَلَةٌ إِلَىٰ حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَيْءٌ وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَىٰ ۗ إِنَّمَا تُنذِرُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُم بِالْغَيْبِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ ۚ وَمَن تَزَكَّىٰ فَإِنَّمَا يَتَزَكَّىٰ لِنَفْسِهِ ۚ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ
“কেউ একে অপরের বোঝা বহন করবে না। কেউ যদি তার অতিরিক্ত ভার বহন করার জন্যে অন্যকে আহবান করে, তবুও কেউ তা বহন করবে না; এমনকি নিকটবর্তী আত্মীয়রাও না। আপনি কেবল তাদেরকে সতর্ক করেন, যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখেও ভয় করে এবং নামায কায়েম করে। যে নিজেকে সংশোধন করলো, সে নিজের নফসের জন্যেই করলো। আর, আল্লাহর নিকটই সকলের প্রত্যাবর্তন।” [সূরা ৩৫/ ফাতির - ১৮]
একজন মানুষের নামাজ যেমন অন্য মানুষ পড়ে দিতে পারে না, তেমনি কোনো ব্যক্তির নিজের কাজগুলো অন্যকে দিয়ে করানো যায় না। একাই নিজের কাঁধে অনেক কাজের বোঝা নিয়ে নেয়া উচিত না। বরং জীবনে অল্প কাজের দায়িত্ব নিয়ে সে কাজটি নিজে নিজেই করা উচিত।
পৃথিবীতে তাঁরাই সফলতা লাভ করে, যারা নিজের কাজগুলো নিজে নিজেই করে ফেলে। যারা অলসতা করে নিজের কাজ অন্যের জন্যে রেখে দেয়, তারা পৃথিবীতে ব্যর্থ হয়। নিজের কাজ নিজে করার মাধ্যমে এবং নিজের ভুলগুলো নিজেই সংশোধন করার মাধ্যমেই একজন মানুষ দক্ষ ও সফল হয়ে উঠে।
৬। সে কাজটি করা উচিত, যে কাজে নিজের ও অন্যের উপকার রয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলছেন –
مَّنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهِ ۖ وَمَنْ أَسَاءَ فَعَلَيْهَا ۗ وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ
“যে সৎকর্ম করে, সে নিজের নফসের জন্যেই তা করে। আর যে অসৎকর্ম করে, তাও তার নফসের উপরই বর্তাবে। আপনার পালনকর্তা বান্দাদের প্রতি মোটেও যুলুম করেন না।”
[সূরা ৪১/ হা-মীম আস-সাজদা - ৪৬]
একজন মানুষ নিজের জন্যে এবং অন্যের জন্যে যতবেশি উপকারী কাজ করতে পারে, তিনি ততবেশি সফল হতে পারেন। সারাজীবন সিগারেট পান করে কেউ সফল হতে পারে না, কেননা এই সিগারেট পান করার মধ্যে নিজের বা অন্যের ক্ষতি ছাড়া কোনো উপকার নেই।
আত্মশুদ্ধি, আত্মউন্নয়ন এবং সফলতার জন্যে সেই কাজগুলো বেশি বেশি করা উচিত, যে কাজগুলোর মধ্যে নিজের ও অন্যের জন্যে উপকার রয়েছে।
উপরোক্ত ছয়টি উপায় ছাড়াও আত্মশুদ্ধি, আত্মউন্নয়ন এবং সফলতার জন্যে কোর’আনে আরো অনেক উপায় বলে দেয়া হয়েছে। তবে, উপরোক্ত ছয়টি উপায়ে সরাসরি নফসের সাথে সম্পর্কিত। তাই উপরোক্ত ছয়টি উপায়ে আমাদের নফসের আত্মশুদ্ধি করা প্রয়োজন।
ইমাম গাজ্জালী বলেনঃ আল্লাহপাক নফসকে সৃষ্টি করে জিজ্ঞাসা করলেন, তোর পরিচয় কি?নফস বলল, আমি আমি, তুমি তুমি।এরপর আল্লাহ তাকে অনাহারে রেখে শাস্তি দিলেন।নফস ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ল।এবার তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোর পরিচয় কি?সে বলল, তুমি আমার মালিক, আমি তোমার দাস।
এখন চিন্তা করে দেখ ক্ষুধা কেমন বস্তু?নাফরমানকেও আল্লাহর বন্দেগী করায়, তাঁর কাছে মাথানত করতে বাধ্য করে।এই নফসে আম্মারাকে আয়ত্বে আনা ও দুর্বল করার জন্য সকল বুযুর্গ রিয়াজত সাধনার আগুনে দগ্ধ হয়েছেন।নফসকে দমন ও ঘৃণিত করে রাখার জন্য তাঁরা মোটা কম্বল আর খেরকা পরতেন।তাঁরা যাবতীয় দুনিয়াবী লোভ লালসা, কামনা বাসনা থেকে নিজকে নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে নফছকে দমন করে সাধনায় কামিয়াব হন।তাই যদি তুমি তোমার নফসের উপর ক্রোধ প্রকাশ কর তবে নফসের দোষ তোমার থেকে সরে যাবে।এইসময় তাকে অগ্নিকুন্ডের উপর রেখে দাও, ফলে এটি ভস্মীভূত হয়ে তোমার দেহ নূরের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَٰٓأَيَّتُهَا ٱلنَّفۡسُ ٱلۡمُطۡمَئِنَّةُ٢٧﴾ [الفجر: ٢٧]
“হে প্রশান্ত আত্মা!” [সূরা আল-ফাজর, আয়াত: ২৭]
﴿وَلَآ أُقۡسِمُ بِٱلنَّفۡسِ ٱللَّوَّامَةِ٢﴾ [القيامة: ٢]
“আমি আরো কসম করছি আত্ম-ভৎর্সনাকারী আত্মার!” [সূরা আল-কিয়ামা, আয়াত: ২]
﴿إِنَّ ٱلنَّفۡسَ لَأَمَّارَةُۢ بِٱلسُّوٓءِ﴾ [يوسف: ٥٢]
“নিশ্চয় নাফস মন্দ কাজের নির্দেশ দিয়ে থাকে।” [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৫২]
থানবীর (রহ:) বলেনঃ নিজেকে সু-সজ্জিত করার আগে খারাপ জিনিসগুলো থেকে আগে মুক্ত করো। খারাপ জিনিসগুলোকে বিদায় দিয়ে ভূমিকে ঘাসমুক্ত করো এরপর তুমি সাজাও। এ অভিজ্ঞতা সবাই জানে আর এইটা করতে হয়। এইটা করতে গিয়ে কিছু সাধনা, রিয়াজত, মুজাহাদা, মুহাসাবা, মুয়াতাবা ইত্যাদির দরকার।
১। রিয়াজত ও মুজাহাদা:
মুজাহাদার কথা আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারিমে বলেছেন। আল্লাহকে পাওয়ার জন্য আল্লাহ প্রাপ্তির পথে মুজাহাদা করতে হবে। নিজেকে আল্লাহর আনুগত্যর দ্বারা সাজানোর আগে রিয়াজত ও মুজাহাদার মাধ্যমে খারাপ জিনিসগুলো তথা নফসের অবৈধ খাহেস অর্থাৎ গুণাহ ত্যাগ করতে হবে। আর তাই এই নফসের দ্বারা দিলকে ক্ষতি থেকে হেফাজতের জন্য নফসকে নিজের আকলের কাছে জিম্মি করে রাখতে হবে। সেইসাথে তার সাথে ততটুকু ইনসাফের আচরণ করি যতটুকু অধিকার শরিয়ত তাকে দিয়েছে। কেননা তা না দিলে এই নফস অন্যভাবে দিলের ক্ষতি করবে। রিয়াজত ও মুজাহাদা নামক সংগ্রাম তো সবসময় চলবেই যেন নফস কখনও আকলের উপর বিজয়ী হতে না পারে।
২। মোরাকাবা :
আর বাইরের শত্রু শয়তান যেন কোনভাবে নফসকে সাহায্যে যুগিয়ে শক্তিশালী করতে না পারে এদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তারপরেও মাঝে মাঝে নফস দুষ্টামি করার চেষ্টা করবে। তাই তাকে কঠোর নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। এজন্য মোরাকাবার দ্বারা তার পাহাড়াদাড়ি করতে হবে ও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে আর এইটা চলবেই।
৩। মুহাসাবা:
তারপরও নফসকে ভীত সন্ত্রস্ত রাখার জন্য মাঝে মাঝে তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করি অর্থাৎ তার কাজের খোঁজখবর তার কাছে থেকেই নেওয়ার চেষ্টা করি যে তুমিই বল? অর্থাৎ তার কাজের হিসাব নেই বা মুহাসাবা করি। প্রতিদিন নফসের মুহাসাবা করি এইটা চলবেই।
৪। মুয়াতাবা:
যদি মুহাসাবা ধরা খেয়ে যায় তাহলে কি তাকে ছেড়ে দেব? কখনই না! নফসকে কিছু আমল করার দ্বারা হালকা শাস্তি দিতে হবে যার নাম মুয়াতাবা। যেমন- নফল নামায, রোযা, দান-সাদকা, রাত্রি জাগরণ, কোন মাসজিদ বা মাদ্রাসার টয়লেট পরিষ্কার, মুসল্লিদের জুতা সোজা করা ইত্যাদি। এরকম করতে থাকলে একসময় নফস বলবে এত শাস্তি পাওয়ার চেয়ে ভুল-ভ্রান্তিগুলো আর নাই করি।
এরকম দমননীতি না হলে নফসকে ঠিক করা যাবে না। আর এ কাজগুলো সম্পন্ন করার নামই এসলাহে নফস বা আত্মশুদ্ধি। মউত পর্যন্ত এমনকি মৃত্যুর আগ পর্যন্তও এ কাজগুলো করতে হবে। কখনও এই শাসনের লাঠি নফসের উপর থেকে উঠানো যাবে না। মৃত্যুর আগ পর্যন্তও নিজের নফসের উপর ভালো কোন বিশ্বাসই রাখা যাবে না যে নফস ভালো হয়ে গেছে। এইটা বলার কোন সুযোগ নাই। এজন্য কিছু সাধনা, রিয়াজত, মুজাহাদা, মুহাসাবা, মুয়াতাবা ইত্যাদি চলতেই থাকবে। আজকে একরকম, কালকে একরকম মন যা চাইল তাই করলাম না! এরকম না। এজন্য প্রথমেই এরকমভাবে চলার একটা পরিপক্ক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর এভাবে চললে এর কিছু ফলাফল পাওয়া যাবে।
৫। ফলাফল:
১। আল্লাহ তায়ালা আপনার উপর খুশি হবেন।
২। আল্লাহ আপনার মধ্যে একটা প্রশান্তি ও আনন্দ নসীব করবেন। যে আনন্দ এক পাল্লায় দিলে আর সারা দুনিয়ার রাজত্ব অপর পাল্লায় দিলে ঐ আনন্দের পাল্লাই তার চেয়ে বেশী ভারী হবে। আর এ প্রশান্তি ও আনন্দপূর্ণ নফসকেই বলা হয় নফসে মুতমাইন্না। আর আল্লাহ তায়ালা এই নফসকে খুবই ভালোবাসেন। এ নফসকে তিনি ডেকে এভাবে বলবেন-
হে প্রশান্ত আত্মা।
তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট ফিরে যাও সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে।
অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও।
এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।
- সূরা ফজর।
আয়াত: ২৭-৩০
৩। এভাবে কেউ যদি নফসের গোলামির শিকল ছিড়ে আল্লাহর গোলামির শিকল পড়ে ও এভাবে তার জীবন চলে তো আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন পরিতৃপ্ত ও নিরাপত্তা, এমন শান্তি ও আনন্দের ব্যবস্থা করবেন যে ইবনে তাইমিয়া (রহ:) এটাকে জান্নাত বলেছেন অর্থাৎ এটাকে দুনিয়ার বেহেশত বলেছেন।
শরীয়ত মানুষকে শান্তি-প্রশান্তি দেওয়ার জন্যই চায় এবং সেইটা আল্লাহ পাক রেখেছেন তার আনুগত্য ও গোলামির মধ্যে। তাই এমন কাজ করব না যার দ্বারা আমার জীবনে সৃষ্টি হয়। ইসলাম চায় জীবন থেকে কিছু আনন্দ নাও। আর এ আনন্দ আল্লাহ তায়ালা রেখেছেন তার আনুগত্যে মধ্যে। আর এ আনুগত্য মনগড়া ভাবে নয় বরং মুহাম্মাদ (স:) এর বতানো পথে, সুন্নাত তরিকায়।
আল্লাহ তায়ালা আমাকে সত্যবাদী জানলেই হলো। কাহারো প্রসংসা কুড়ানোর বা বুযুর্গী জাহিরের দরকার নেই। এজন্য দুনিয়ার পিছনে ছুটবই না। এতো নিজের পরিচয় হারানোর মেহনত। নিজের দিল দ্বারা এগুলো উপলব্ধি করতে হবে যে কোনটি ভালো আর কোনটি মন্দ। এজন্য আল্লাহর কাছে একটা পবিত্র দিল অর্থাৎ ক্বলবে সালিম চাওয়া আর এটা তারই সোপর্দে দিয়ে দিয়ে দুয়া করা যে, হে আল্লাহ আপনিই এই দিলের হেফাজতের দায়িত্বটা নিয়ে নেন। এই দিলটাকে বলা হয়েছে একটা বিবেক, সমঝ, হেদায়েত। তাই ভিতর ও বাহিরের দুশমন যতদিন বিজয়ী থাকবে তো হেদায়েত পাওয়া যাবে না বরং এ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। তাই উপরোক্ত পদ্ধতিতে উভয় দুশমনকে সবসময়ই পরাজিত রাখতে হবে।
এছাড়া আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া করতে হবে। কিন্তুু আল্লাহর দেওয়া কোন নেয়ামতকে নিজের অর্জন ভেবে দিলের মধ্যে যেন অহংকার সৃষ্টি না হয় এদিকে খেয়াল রাখতে হবে সাথে সাথে পরশ্রীকাতা থেকেউ নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা যাকে যে নেয়ামত দান করেছেন এ বন্টনের উপর রাজি থাকতে হবে হিংসা করা যাবে না। সব নেয়ামততো আল্লাহরই দেওয়া, তারই পক্ষ থেকে। তিনি দিয়েছেন তাই পেয়েছি এইটা সবসময় ভাবতে হবে।
এজন্য আল্লাহর নেয়ামতের শোকরার্থে কিছু নফল এবাদত করতে হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স:) ই বলেছেন যে, আমি কি আল্লাহর শোকর গুজারী বান্দা হবো না।
কোরআন পাকের বর্ণনার ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার নিয়ম হলো- সাধারণ কোনো কথা স্বাভাবিক ভাবে বর্ণনা করে থাকেন। কোনো কসম বা তাকিদের শব্দ ব্যবহার করেন না। কিন্তু বিষয়টি যদি গুরুত্বপূর্ণ হয় তখন একটা বা দুটো কসম ব্যবহার করে বিষয়টি মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলেন।
যথা- একটি জিনিসের কসম করে আল্লাহপাক বলেন, যুগের কসম। আবার কখনো দুটো জিনিসের কসম করে বলেন, ত্বীন ও জয়তুনের কসম। কখনো তিনটা জিনিসের কসম করে বলেন, 'নূন ও কলম এবং তাঁরা (ফেরেশতারা) যা লিখে তার কসম।
কিন্তু 'তাযকিয়ায়ে নফস' তথা 'এহসান' ও আত্মশুদ্ধি হাসিল করার ব্যাপারে সূরা 'শামসে' সাতটি কসম করে আল্লাহপাক বলেন,
"শপথ সূর্যের ও তার কিরণের। শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে। শপথ দিবসের যখন সে সূর্যকে প্রখর ভাবে প্রকাশ করে। শপথ রাতের যখন সে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে। শপথ আকাশের এবং যিনি তা নির্মাণ করেছেন, তাঁর। শপথ পৃথিবীর এবং যিনি তা বিস্তৃত করেছেন, তাঁর। শপথ প্রাণের এবং যিনি তা সুবিন্যস্ত করেছেন, তাঁর। অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। যে ব্যক্তি নিজেকে শুদ্ধ করে, সে সফলকাম হয়। আর যে ব্যক্তি নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।"
(সূরা শামস, আয়াত : ০১-১০)
সুতরাং এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, 'এসলাহে নফস' বা আত্মশুদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি এবং আল্লাহ পাকের কাছে তা কত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে আত্মশুদ্ধি গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন।

নফসের তাবেদারী করা যাবে নাঃ

কোন ব্যক্তি যদি নফসের তাবেদারী করে, তাহলে তার পক্ষে কখনও পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র সুন্নাহ্ শরীফ এর উপর কায়েম থাকা যাবে না।আর এজন্যই একটা ওয়াকেয়া উল্লেখ করা হয়।হযরত আব্দুল কুদ্দুস গাঙ্গুহী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি খুব বড় বুযুর্গ ওলী ছিলেন, যিনি হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতা শায়খ আব্দুল আহাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পীর সাহেব ছিলেন। সেই উনি একদিন সফরে যাচ্ছিলেন, এক পাহাড়িয়া এলাকা দিয়ে সফর করে। ভ্রমণ করছিলেন এক পাহাড়িয়া এলাকায়। গিয়ে দেখলেন, এক পাহাড়ের গুহার কাছে কিছু লোক জমা হয়ে রয়েছে। উনি লোকদেরকে জিজ্ঞেস করলেন- হে ব্যক্তিরা তোমরা যে পাহাড়ের এখানে জমা হয়ে রয়েছো, কি কারণ? লোক নেই জন-মানবহীন এলাকা। এখানে তোমরা কি করো? লোকেরা জবাব দিলো যে, হযূর! এই পাহাড়ের এই গুহার ভিতরে একজন লোক থাকে। এক সাধক থাকে সে বৎসরে একদিন বের হন। বের হয়ে মানুষেরা তেল-পানি ইত্যাদি যা নিয়ে আসে এগুলিতে ফুঁ দেন। সেগুলি ফুঁ দিলে, যে যে নিয়তে নিয়ে আসে সেই নিয়তটা তার কামিয়াব হয়, হাসিল হয়। আমরা এসেছি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই সাধক বের হয়ে আসবে। আসলেই আমরা সেগুলি ফুঁ নেওয়াবো, সেই ব্যক্তি ফুঁ দিলে আমরা এগুলি নিয়ে চলে যাব। উনি বললেন যে, কোথায়? এই পাহাড়ের ভিতর একটা গুহা আছে। গুহার মধ্যে কোন দরজা-জানালা নেই। কোন দরজা-জানালা নেই, একটা মাত্র ছিদ্র আছে। হযরত আব্দুল কুদ্দুস গাঙ্গুহী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, তাহলে এই লোকটা বের হয় কি দিয়ে। তারা বললো যে, হুযূর এই লোকটা একটি ছিদ্র দিয়ে বের হয়। ছিদ্র দিয়ে আবার প্রবেশ করে। আশ্চর্য ব্যাপার। কোন দরজা নেই কোন জানালা নেই বের হওয়ার মত। কিন্তু একটামাত্র ছিদ্র, ছোট্ট একটা ছিদ্র। যেটা দিয়ে বের হয় এবং প্রবেশ করে। লোকটা ছিলো যুগী। হযরত আব্দুল কুদ্দুস গাঙ্গুহী রহমতুল্লাহি আলাইহি চিন্তা করলেন, লোকটা তো মানুষকে গুমরাহ্ করছে। উনি করলেন কি, উনি যেহেতু ওলী বুযূর্গ ছিলেন, উনি বাতাস হয়ে গেলেন। বাতাস হয়ে উনি ঠিক ঐ ছিদ্র দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেন। ভিতরে প্রবেশ করে দেখেন, সে যুগী ভিতরে বসা আছে, সে বের হবে। উনি যখন ভিতরে প্রবেশ করলেন উনাকে দেখে সেই যুগী বললো- যে আপনি কে, এখানে প্রবেশ করলেন? কার পারমিশনে আপনি এখানে আসলেন? হযরত আব্দুল কুদ্দুস গঙ্গুহী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন যে, দেখ! আমি অমুক আব্দুল কুদ্দুস। আমি একজন মুসলমান, তোমার এখানে আমি এসেছি। তুমি এখানে কি করো? সে ব্যক্তি বললো যে, আমার এখানে তো কারো আসার পারমিশন নেই। কেন আপনি এখানে প্রবেশ করলেন? উনি বললেন, প্রবেশ করলাম তোমার বুযুর্গী দেখার জন্য। তুমি ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ কর, ছিদ্র দিয়ে বের হও। মানুষ তোমার ভক্ত হচ্ছে। মানুষ গুমরাহ্ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন, সেটা তোমাকে বলার জন্য। সে বললো যে হ্যাঁ, আমি সাধনা করে এটা হাসিল করেছি। এটা আমার হক্ব, আমার প্রাপ্য। তখন হযরত আব্দুল কুদ্দুস গাঙ্গুহী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাকে বললেন যে, ঠিক আছে, তুমি যে সাধনা করেছ, আচ্ছা তুমি একটা কাজ করতে পার? আমি যদি বলি, আমি যা বলবো তুমি সেটা হতে পারবে? তুমি কি পানি হতে পার? সে ব্যক্তি বললো, হ্যাঁ আমি পানি হতে পারি। উনি বললেন- যে তুমি পানি হও তো দেখি। সে পানি হলো। উনি করলেন কি উনার যে রুমাল ছিল, রুমাল দিয়ে অল্প একটু পানি ভিজায়ে রাখলেন। সে আবার যখন মানুষ হয়ে গেল। স্বাভাবিক তখন উনি বললেন- যে এক কাজ কর, আমি এখন পানি হব, হলে তুমি তোমার একটা কাপড়ের টুকরা দিয়ে সেখান থেকে কিছু পানি রেখে দিও, সে বললো ঠিক আছে। উনি পানি হলেন, সে কিছু পানি রেখে দিল। উনি আবার স্বাভাবিক মানুষ হয়ে গেলেন, যখন স্বাভাবিক মানুষ হলেন, তখন বললেন, কোথায় পানিটা রেখেছ সেটা দেখাও তো? সে একটা কাপড় ভিজা দেখাল, সেখানে আতর-গোলাপের ঘ্রাণ। আর তার যে পানি রাখা হয়েছিল সেটা দেখানো হলো। দেখতো এটা কিসের ঘ্রাণ, এখানে দেখা যায় দুর্গন্ধ, মল-মূত্রের গন্ধ। সে বললো, হুযূর! এটার কি হাক্বীক্বত? আপনারটা আতর গোলাপের ঘ্রাণ, আর আমারটার মধ্যে দুর্গন্ধ তার কি হাক্বীক্বত? উনি বললেন- যে তার হাক্বীক্বত কি জান? তুমি কি করে এটা হাসিল করেছ বলো তো দেখি? সে বললো- আমি সব সময় নফসের বিরোধীতা করি। সবসময় আমি আমার নফসের বিরোধীতা করি। যার বদৌলতে আমি এটা হাসিল করতে পেরেছি। উনি বললেন- তাই নাকি। আচ্ছা আমি যদি তোমাকে বলি তুমি এখন ঈমান আন। কলেমা পড়তো দেখি। কালেমা পড়ে তুমি ঈমান আন। সে তখন সমস্যায় পড়ে গেল। কারণ সবসময় সে তার নফসের বিরোধীতা করে। এখন তার নফস চায় না সে কলেমা পড়ুক। উনি বললেন- যে তুমি কলেমা পড়, তাহলে তুমি তার হাক্বীক্বত বুঝবে। সে বললো- যে আমার নফসতো সেটা চায় না। উনি বললেন- দেখ তোমার এত বিশ, ত্রিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ, ষাট বৎসরের সাধনা তুমি নফসের বিরোধীতা করে এটা হাসিল করেছ, এখন যদি তুমি নফসের বিরোধীতা না কর, তার পক্ষে থাক, তোমার এটা নষ্ট হয়ে যাবে। এখনই তোমার বিরোধীতা করা উচিত। তখন সে উনার কথায় তার এই জিনিসগুলি ঠিক রাখার জন্য সে কলেমা শরীফ পাঠ করলো। لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم. সে পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেল। হয়ে যাওয়ার পর উনি বললেন- যে ঠিক আছে এক কাজ কর, এবার তুমি আবার পানি হও, এবার তুমি আবার পানি হও। সে আবার পানি হলো উনি একটু পানি আবার রেখে দিলেন, সে যখন আবার স্বাভাবিক মানুষ হলো, তাকে ঘ্রাণ নিতে দিলেন। দেখতো আতর-গোলাপের গন্ধ। সুবহানাল্লাহ! আতর-গোলাপের ঘ্রাণ হয়ে গেছে তোমার মধ্যে, কি ব্যাপার। اانما المشر كون نحبس নিশ্চয়ই মুশরিক-কাফির যারা, তারা নাপাক তাদের থেকে দুর্গন্ধ বের হবে। এখন এটা ফিকিরের বিষয়। যেটা আমার বলার উদ্দেশ্য হলো- এই যুগী ব্যক্তিটা জীবন ভর নফসের বিরোধীতা করে সে কিছু হাসিল করেছে এবং ঠিক কলেমা শরীফটাও নফসের বিরোধীতা করতে গিয়ে সে পাঠ করলো। যার বদৌলতে মহান আল্লাহ পাক তাকে ঈমান দিয়ে দিলেন, সে আল্লাহওয়ালা হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ! এজন্য বলা হয়েছে, واما من خاف مقام ربه ونهى الفنس عن الهوى فان الجنة هى الماؤى. যে মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে দাঁড়ায়ে জাওয়াব দিতে ভয় করবে এবং নফসের বিরোধীতা করবে তার স্থান হবে মাওয়া বেহেশত।

নফসের আধ্যাত্মিক সাধনার তরিকা সমুহঃ


আধ্যাত্মিকতার জগতে তাযকিয়ায়ে নফস (আত্মশুদ্ধি) ও তাসাওউফ ব্যাপক পরিচিত দু'টি শব্দ। এখন জানা যাক এ দু'টির পরিচয় কি? তাযকিয়ায়ে নফসের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, আত্মশুদ্ধি বা আত্মাকে পরিশুদ্ধকরণ। শরীয়তের দৃষ্টিতে যার অর্থ অন্তরের দোষ-ত্রুটি পরিত্যাগ করে সৎ ও উত্তম গুণাবলী এমনভাবে অর্জন করা, যাতে তা মজ্জাগত স্বভাবে পরিণত হয়ে যায়। আর তা শরীয়তের দৃষ্টিতে ফরযে আইন। এই আত্মশুদ্ধিকেই কুরআনের ভাষায় "তাযকিয়া" বলা হয়। যেমন- সূরা আশ-শামছের ৯নং আয়াত, আল-ইমরানের ১৪৫ নং আয়াত, সূরা বাকারার ১২৯ নং আয়াত এবং অসংখ্য হাদীসে এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত : ইলমে তাসাওউফ। ইলমে তাসাওউফ বলা হয় ঐ ইলমকে যার দ্বারা অন্তরের রোগসমূহের দোষত্রুটির পরিচয়, বিশ্লেষণ এবং তার চিকিৎসার উপায়-উপকরণ জানা যায়। তাসাওউফের বহু সিলসিলা থাকা সত্ত্বেও চারটি সিলসিলা অধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। কারণ সিলসিলা চতুষ্টয়ের মাশায়েখ গণ আত্মশুদ্ধির কাজ এত অধিক পরিমাণে করেছেন, যা আল্লাহর দরবারে কবুল ও মঞ্জুর হয়ে তাদের ফয়জ ও বরকতে অগণিত পথভোলা মানুষ সঠিক পথের সন্ধান পেয়ে সোনার মানুষে পরিণত হয়েছে। সেই চার সিলসিলার প্রথম হচ্ছে "কাদেরিয়া", শায়খে হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহ. (৪৭০-৫৫৯ হিজরী)-এর দিকে সম্মন্ধ করে এ তরিকাকে বলা হয় কাদেরিয়া তরিকা। দ্বিতীয় হচ্ছে "চিশতিয়া", হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহ. (৫২৭-৬৩৩ হিজরী)-এর দিকে সম্মন্ধ করে এ তরিকাকে বলা হয় চিশতিয়া তরিকা। তৃতীয় "সোহারাওয়ার্দিয়া", হযরত শায়খে শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দি রহ. (৫৩৯-৬৩২ হিজরী)-এর নাম অনুসারে এ তরিকাকে বলা হয়, "সোহরাওয়ার্দিয়া" তরিকা। ৪র্থ হচ্ছে "নকশাবন্দিয়া", হযরত বাহাউদ্দিন নকশাবন্দি রহ. (৭১৮-৭৯২ হিজরী)-এর সাথে সম্মন্ধ করে এ তরিকাকে বলা হয় নকশাবন্দিয়া তরিকা।
এ চার সিলসিলার প্রতিটি সর্বশেষে রাসূল সা. -এর সাথে গিয়ে মিলেছে। সর্বকালেই আধ্যাত্মিক সাধনার প্রয়োজনীয়তা ছিল অপরিসীম। বাহ্যিক আচার-আচরণের বিশুদ্ধতার সাথে সাথে আত্মিক নূরানিয়্যাতের অধিকারী হওয়ার উপরই মূলত একজন মুমিনের পূর্ণাঙ্গতা ও সফলতা নির্ভরশীল।
নফস মূলত একটি, তবে এর অনেক সিফাত তথা গুণ রয়েছে। ফলে নফসের গুণের হিসেবে এক একটি নাম দেওয়া হয়েছে। একে মুতমাইন্না (مطمئنة) বলা হয়েছে, যেহেতু সে তার রবের ইবাদত ও ভালোবাসায় মুতমাইন্ন তথা প্রশান্ত। আবার একে লাওয়ামাহ(لوامة) বলা হয়েছে, কেননা সে ব্যক্তির বাড়াবাড়িতে তাকে ভর্ৎসনা করে। আবার একে আম্মারাহ(أمّارة) বলা হয়েছে, যেহেতু সে অন্যায় কাজের আদেশ দেয়। বস্তুত অন্যায় কাজের নির্দেশ দেওয়াই হলো নফসের প্রকৃতি, তবে আল্লাহ যাকে তাওফিক দান করেন, যাকে হিদায়াতের ওপর স্থির রাখেন এবং সাহায্য করেন তার কথা আলাদা।

এককথায় নফসকে নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কিছু পরামর্শঃ

১. ফজরের পরে না ঘুমানোর অভ্যাস করুন। প্রয়োজনে কাইলুলা (দুপুরের হালকা ঘুম) করা যাবে।

২. দিনে ম্যক্সিমাম তিনবার খাবার অভ্যাস করুন। সকাল, দুপুর ও রাতের খাবারের মাঝখানে হাবিজাবি খাবার যেমন ফাস্টফুড, স্ট্রিটফুড খাওয়া যাবেনা ক্ষুধা লাগলে খেজুর, আপেল এগুলো খাওয়া যায়।
৩. প্রতিবেলা খাবার সময় যেটুকু খাবার যথেষ্ট বলে মনে হবে তার থেকে একটু কম খাবেন।
৪. অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। কোন মন্তব্য করার আগে একবার চিন্তা করুন এই কথাটা আপনি না বললে কি কোন লস আছে? বলা কি আবশ্যিক? উত্তর না হলে ওই কথা বলার দরকার নাই।
৫. সকাল সন্ধ্যার জিকির-আযকার করুন।
৬. ইশরাকের সালাত আদায়ের অভ্যাস করতে হবে।
৭. প্রতিদিন নিয়মত কুরআন পড়ার অভ্যাস করতে হবে। হতে পারে ১ রুকু থেকে ১ পারা - যেকোন পরিমাণ।
৮. ঘুমের পরিমাণ কমাতে হবে।
৯. ফজরের পরে কিছুক্ষণ ব্যায়ামের অভ্যাস করা। আর কিছু না পারলে ১৫-২০ মিনিট জগিং করে এসে গোসল করে ইশরাকের সালাত পড়ার অভ্যাস করা।
১০. দৃষ্টি অবনত রাখা। না পারলে ওইসব জায়গা এড়িয়ে চলার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।
১১. ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার (সোশ্যাল মিডিয়া) কম ব্যবহার করা।
১২. প্রতিদিন হিফজের একটা টার্গেট নেয়া। এটা প্রতিদিন এক আয়াতও হতে পারে৷ কিন্তু টার্গেট পুরা করতে হবে। এটা খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ।
১৩. বিশেষকরে রাতে ভরপেট খাওয়া পরিহার করতে হবে৷
১৪.রাতে ঘুমানোর পূর্বে অযু করে দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করে নিন এবং ঘুম না আসা পর্যন্ত আসতাগফিরুল্লাহ পড়তে থাকুন।
১৫.তাহাজ্জুদ সালাতের অভ্যাস করুন নিয়মিত। ইনশাআল্লাহ রাব্বে কারিম আপনার অন্তরকে প্রশান্ত করে দিবেন।
আল্লাহ্‌ সুবাহান অয়াতালা আমাদের নফসের নিয়ন্ত্রণ করার এবং আমাল্গুল পরিপূর্ণভাবে পালনের তৌফিক দান করুন । আমিন আমিন আমিন ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আমাদের মা বোনদের জন্য কিছু প্রশ্ন উত্তর ।

  স্ত্রী: আজকে তোমাকে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।। স্বামী: বল। স্ত্রী: তুমি এত তোমার বৃদ্ধা মাকে নিয়ে ভাবো কেন। আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আমাদের ছেলে মেয়ের কোন চিন্তা করবার না?? স্বামী: আমি ঘরের বড় ছেলে এটা আমার দায়িত্ব।আর তা ছাড়া মা বাবা আমাকে অনেক কষ্টে মানুষ করেছেন আমি তাকে নিয়ে না ভাবলে কে ভাববে। স্ত্রী: তোমার তো আরো ভাই আছে তারা দেখবে। স্বামী: তাদের স্ত্রীরাও যদি তোমার মত এমন বলে । তাহলে আমার বৃদ্ধা মাকে কে দেখবে?? স্ত্রী: আমি এতো কিছু জানিনা। আমি পারবো না তোমার মায়ের খাটনি খাটতে।আর তোমাকেও দিবো না তোমার মায়ের পিছনে এত টাকা খরচ করতে। স্বামী: আজ থেকে আমি আমার মায়ের পায়ের নিচে ঘুমাবো। তোমার পাশে ঘুমানোর চেয়ে আমার মায়ের পায়ের নিচে ঘুমানো হাজার গুণ শান্তি! স্ত্রী: রাগান্বিত হয়ে!!আজ বুঝলাম তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না!! তোমার সাথে আর সংসার করা যাবে না!! আচ্ছা আরেকটা কথার উত্তর দাও! তুমি আমাকে না তোমার মাকে বেশি ভালোবাসো!!? স্বামী: দুজনকে আমার জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসি!! স্ত্রী: কাকে বেশি! ধরো আমি আর তোমার মা একটা বিপদে পড়েছি! যে কেউ একজনকে বাঁচাতে পারবে!! এখন

স্বামীকে বশ করার হালাল যাদু

অনেকেই অভিযোগ করেন স্বামী তার কথা শুনে না বা পরনারীতে আসক্ত। এজন্যও বিভিন্ন রুকইয়াহও চেয়ে বসেন। কিন্তু আপনি কি জানেন সম্পূর্ণ হালাল ভাবেই আপনি আপনার স্বামীকে যাদু করতে পারেন? এর জন্য দরকার একটু সচেতনতা।  আমাদের সমাজে স্বামী-স্ত্রী অমিলের পিছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একে অপরের প্রতি দায়িত্ব, অধিকার ও ভালোবাসার অভাব কাজ করে। বেশিরভাগ দম্পত্তিই জানেন না তাদের এই “বিবাহ বন্ধনের উদ্দেশ্য কি”। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সূরাতুর রুম এর ২১ নং আয়াতে বলেনঃ “এবং তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে হচ্ছে তিনি তোমাদের মধ্যে থেকে তোমাদের জন্য সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাদের মাঝে প্রশান্তি (সুকুন) খুঁজে পাও এবং তিনি তোমাদের মাঝে দয়া ও ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন।” এই আয়াতে আল্লাহ আমাদেরকে বিয়ের উদ্দেশ্য বলে দিয়েছেন। আল্লাহ আমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন যেন আমরা একে অপরের মাঝে “প্রশান্তি” খুঁজে পাই। এই প্রশান্তি বলতে শারিরীক ও মানসিক দুইধরণের প্রশান্তিকেই অন্তর্ভুক্ত করে। শারিরীক প্রশান্তির কথা সবাইই বুঝি, কিন্তু মানসিক প্রশান্তির ব্যাপারে কতজনই বা সচেতন। আপনি চিন্তা করুন খাদিজাহ বিনতে খুইয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার কথা

মাহারাম এবং গায়রে মাহারাম কারা ?

মাহারামঃ  যে সকল পুরুষের সামনে নারীর দেখা দেওয়া, কথা বলা  জায়েজ এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধন সম্পূর্ণ  হারাম তাদের কে শরীয়তের পরিভাষায় মাহরাম বলে। গায়রে মাহারামঃ  যে সকল পুরুষের সামনে যাওয়া নারীর জন্য শরীয়তে জায়েজ নয় এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধন বৈধ তাদের কে গায়রে মাহরাম বলে। সূরা আন নূরের ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নারীর মাহরাম নির্ধারিত করে দিয়েছেন । সূরা আন নূরের পূর্ণ আয়াতঃ "আর মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই-এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজেদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা